আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নেওয়া সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল করায় চীনা বিনিয়োগকারীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে নেওয়া প্রকল্পগুলো বাতিলের ঘটনায় বিদেশি অংশীদারদের মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। গতকাল রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে আয়োজিত ‘বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য শক্তি খাতে চীনের বিদেশি বিনিয়োগের সাম্প্রতিক চ্যালেঞ্জ : অগ্রগতির পথ’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন বিশেষজ্ঞ ও বিনিয়োগকারীরা। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষক আবরার আহমেদ। সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে চীনের বিপুল বিনিয়োগ এবং তা বাধাগ্রস্ত হওয়ার নানা দিক তুলে ধরেন।
রাজনৈতিক অনিয়মের অভিযোগে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নেওয়া ৩ হাজার ২৮৭ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩৭টি সৌর প্রকল্প বাতিল করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এসব প্রকল্পে চীন, সিঙ্গাপুর, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রসহ ১৪টি দেশের বিনিয়োগ ছিল। এর মধ্যে কেবল চীনের প্রকল্পই ছিল ৪টি। বিনিয়োগকারীরা ইতোমধ্যে ৩০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছেন, ১৫টি কোম্পানি জমিও কিনে ফেলেছে। চাইনিজ ইনভেস্টর্স ইন বাংলাদেশের সভাপতি হা কুন বলেন, সরকারের পূর্বের অনুমোদনের ভিত্তিতে চীনের বিনিয়োগকারীরা আর্থিক অঙ্গীকার করেছেন, জমি কিনেছেন ও ব্যাংক ঋণ নিয়েছেন। অথচ প্রকল্প বাতিল হওয়ায় বিনিয়োগ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তিনি সরকারকে শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন। সিপিডি মনে করে, প্রকল্প বাতিলের সিদ্ধান্ত বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে নেতিবাচক বার্তা দিতে পারে।
প্রতিষ্ঠানটি বলছে, পুরোনো নীতির আলোকে যেসব বিনিয়োগ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছিল, সেগুলোর ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ বা পুনর্মূল্যায়ন ছাড়া হঠাৎ বাতিল যৌক্তিক নয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী, কোম্পানি গঠন, লাইসেন্স ও জমিসংক্রান্ত জটিলতা, ডিজিটাল প্রক্রিয়ার অভাব, একাধিক দপ্তরে ঘুরতে হওয়া এবং স্বচ্ছতা সংকট বিদেশি বিনিয়োগে বাধা তৈরি করছে। বিশেষ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানির মতো দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পে এমন অনিশ্চয়তা তৈরি হলে ভবিষ্যতেও কেউ বিনিয়োগে আগ্রহী নাও হতে পারেন।
বাতিল করা প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি পর্যালোচনা করে উপযুক্তদের পুনরায় বিবেচনায় আনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সিপিডি। একই সঙ্গে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে নীতিগত স্থিতিশীলতা ও আগাম বার্তা নিশ্চিত করার আহ্বানও জানান তারা।