ভুয়া ভোটের মাধ্যমে নির্বাচনি ফলাফল নিজের পক্ষে আনার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার মামলায় পেনসিলভেনিয়া স্টেটের মিলবোর্ন বরোর দুই কাউন্সিলম্যান নুরুল হাসান (৪৮) এবং রফিকুল ইসলামকে (৫২) বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড ও জরিমানা করা হয়েছে। ১৮ জুন ফিলাডেলফিয়ায় অবস্থিত ফেডারেল কোর্টের জজ হার্ভে বার্টেল থার্ড প্রতারণার এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। চট্টগ্রামের বন্দর টিলার সন্তান নুরুল হাসান তিন বছরের কারাদণ্ড ভোগের পর মুক্তিলাভ করলেও আরও এক বছর কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারিতে থাকতে হবে এবং ৩ হাজার ৩০০ ডলার জরিমানা করা হয়েছে। ২০২১ সালে এই মিলবোর্ন বরোর মেয়র প্রার্থী ছিলেন নুরুল হাসান। ২০১৬ সাল থেকে এই বরোর কাউন্সিলম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়ে আসা নুরুল হাসান এমনই প্রতারণামূলক আচরণে লিপ্ত হয়েছিলেন মেয়র পদে আরেক বাংলাদেশি প্রার্থী মাহবুবুল আলম তৈয়বকে ধরাশায়ী করতে। উল্লেখ্য, তৈয়বও চট্টগ্রামের হালিশহরের সন্তান। একই ভুয়া ভোট ও প্রতারণার মামলায় মিলবোর্ন বরোর কাউন্সিলম্যান রফিকুল ইসলামকে এক বছর এক দিনের কারাদণ্ড এবং দণ্ডভোগের পর আরও এক বছর কর্র্তৃপক্ষের নজরদারিতে থাকতে হবে। তাকে জরিমানা করা হয়েছে ১ হাজার ডলার। কুষ্টিয়ার সন্তান রফিকুল ইসলাম ২০১৯ সাল থেকে এই বরোর কাউন্সিলম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়ে আসছিলেন। একই মামলার অপর অভিযুক্ত কাউন্সিলম্যান মনসুর আলীর (৪৮) বিরুদ্ধে একই বিচারক জেল-জরিমানা ঘোষণা করবেন ২৬ জুন। মনসুর আলী হচ্ছেন পাবনার সন্তান। এই তিনজনই গত এপ্রিলে নিজেদের অপকর্মের জন্য দোষ স্বীকারের পাশাপাশি কমিউনিটির বিশিষ্টজনদের কাছে সুপারিশপত্র নিয়ে আদালতে সাবমিট করেছিলেন দণ্ডের মাত্রা লঘু করার জন্য। কিন্তু নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দেওয়ার ষড়যন্ত্রকে প্রশাসন গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য করে সর্বোচ্চ দণ্ডের রায় ঘোষণা করেছেন বলে পেনসিলভেনিয়াস্থ ইউএস অ্যাটর্নি ডেভিড ম্যাটকালফ গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন। মামলার উদ্ধৃতি দিয়ে ইউএস অ্যাটর্নি ডেভিড ম্যাটকালফ আরও জানান, দীর্ঘ তদন্তের পর গত ফেব্রুয়ারিতে অভিযুক্ত তিনজনের বিরুদ্ধে ভোটার নিবন্ধনে প্রতারণা, অন্য এলাকার মানুষকে ভুয়া ঠিকানায় ভোটার বানানো এবং ডাকযোগে ব্যালট পাঠানোর আগে স্বাক্ষর জাল করে নিজের পক্ষে ভোট দেওয়ার তথ্য প্রমাণিত হয়। এর দুই মাস পর গত এপ্রিলে তিনজনই দোষ স্বীকার করেন। নুরুল হাসান এবং রফিকুল ইসলামকে আগামী ১৫ আগস্ট নিকটস্থ কারাগারে রিপোর্ট করতে হবে এবং সেদিন থেকেই শুরু হবে তাদের জেলজীবন।
ফিলাডেলফিয়া সিটির মধ্যে ছোট্ট একটি এলাকা নিয়ে গঠিত ‘মিলবোর্ন বরো’র মেয়রসহ কাউন্সিলম্যানদের অধিকাংশই বাংলাদেশি। যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার রাজনীতি ও প্রশাসনে বাংলাদেশিদের উত্থানের ক্ষেত্রে এই সিটিকে অনেকে উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করেন। সেই সিটির নির্বাচিত কাউন্সিলম্যানরা এমন জালিয়াতি আর প্রতারণার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার সংবাদে গোটা কমিউনিটি বিস্ময়ে হতবাক। জানা গেছে, মিশিগানে বাংলাদেশি অধ্যুষিত হ্যামট্রমিক সিটিতেও বাংলাদেশি কাউন্সিলম্যানের বিরুদ্ধে জালিয়াতি আর প্রতারণার একই ধরনের অভিযোগ উঠেছে। সে ব্যাপারেও উচ্চপর্যায়ের তদন্ত চলছে বলে সর্বশেষ সংবাদে জানা গেছে। মিলবোর্ন বরোর তিন প্রার্থীর উপরোক্ত প্রতারণা ও জালিয়াতির মামলার বিবরণে জানা গেছে, এই বরোর অধিবাসী নন এমন পরিচিতজনদের নাম ও জন্মতারিখ চুরি করে এখানকার ঠিকানায় ভোটার বানানো হয় এবং নিজেদের ইমেইল দেওয়া হয় ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হওয়ার সময়। এসব করা হয় বোর্ড অব ইলেকশনের ওয়েবসাইটে। এরপর ডাকযোগে ভোট প্রদানের অনুরোধ জানানো হয় ওয়েবসাইটেই। কথিত ঠিকানায় ব্যালট আসার পর এই তিনজনে তা সংগ্রহ করেন (যেহেতু তারাই দিয়েছেন সেই ঠিকানা) এবং নুরুল হাসানকে মেয়র হিসেবে ভোট প্রদানের পর তা ডাকযোগেই ফেরত পাঠানো হয় বোর্ড অব ইলেকশনের অফিসে। এক্ষেত্রে জাল স্বাক্ষর প্রদান করা হয়। এমনভাবে জাল ভোট প্রদানের পরও নুরুল হাসান ২৭ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন তৈয়বের কাছে। ফিলাডেলফিয়াস্থ এফবিআইয়ের স্পেশাল এজেন্ট ওয়াইন এ জ্যাকবসের নেতৃত্বে এ প্রতারণার তদন্ত চালানো হয়। ইউএস অ্যাটর্নি ম্যাটকালফ বলেন, মিলবোর্ন বরোর মেয়র কে হবেন সে সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভোটারদের ইচ্ছাকে ছিনতাইয়ের ফাঁদ পেতেছিলেন অভিযুক্তরা। নির্বাচনি ব্যবস্থার ওপর জনগণের আস্থার ব্যাপারটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এজন্যই আমার অফিস বদ্ধপরিকর সুষ্ঠু বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে। এফবিআইয়ের স্পেশাল এজেন্ট ওয়াইন বলেন, নির্বাচনি প্রক্রিয়া হচ্ছে গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি। এ অবস্থায় যারা প্রতারণার মাধ্যমে ফলাফল ছিনতাইয়ের পাঁয়তারা করে তারা শুধু বেআইনি কাজেই লিপ্ত হয় না, তারা ভোটারের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রেও লিপ্ত হয় এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার ষড়যন্ত্র চালায়। এফবিআই সব সময়ই নির্বাচনি ব্যবস্থাকে নিরপেক্ষ রাখতে সংকল্পবদ্ধ।