পাহাড়ে হাজারো অনিবন্ধিত ট্যুরিস্ট গাইড। নেই প্রশিক্ষণ। বান্দরবানে ৯০০ ট্যুর গাইডের কারোরই প্রশিক্ষণ নেই। রাঙামাটিতে এমন হাজারো ট্যুরিস্ট গাইড আছেন যাদের ট্যুরিজম সম্পর্কে কোনো প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা নেই। কিন্তু টাকার লোভে পর্যটকদের নিয়ে যাচ্ছেন ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়, ছড়া আর ঝরনায়। খাগড়াছড়িতেও একই অবস্থা। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
রাঙামাটি : রাঙামাটিতে এমন হাজারো ট্যুরিস্ট গাইড আছেন, যাদের ট্যুরিজম সম্পর্কে কোনো প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা নেই। কিন্তু টাকার লোভে পর্যটকদের নিয়ে যাচ্ছেন ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়, ছড়া আর ঝরনায়। নিবন্ধিত ট্যুরিস্ট গাইড সংগঠন মাত্র পাঁচটি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম (ফেসবুক) এবং ব্লকে সুন্দর ছবি ও ভিডিও দেখে অনেকে আকৃষ্ট হচ্ছেন। নিবন্ধিত নাকি অনিবন্ধিত, যাচাইবাছাই না করে গ্রুপ ট্যুরের দিচ্ছেন বুকিং। তাদের হাত ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাই অনেক পর্যটক পড়ছেন বিপদে। অকালে প্রাণ হারাচ্ছেন।
ট্যুরিস্ট পুলিশ রাঙামাটি রিজিয়নের পুলিশ সুপার মো. নিহাদ আদনান তাইয়ান বলেন, রাঙামাটিতে অনেক ট্যুরিস্ট গাইড আছেন। আমরা তাদের তালিকা করছি। তবে নিবন্ধিত সংগঠন মাত্র পাঁচটি। অভিজ্ঞতা ছাড়া, প্রশিক্ষণ ছাড়া, ট্যুরিজম সম্পর্কে ধারণা ছাড়া ট্যুরিস্ট গাইড পরিচালনা করতে দেওয়া হবে না। আমরা চাই পাহাড়ে পর্যটক আসুক এবং নিরাপদে থাকুক।
বান্দরবান : গত দেড় দশকে বান্দরবান পার্বত্য জেলায় পর্যটন বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে বিপুল সংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটলেও তাদের আতিথেয়তা দেওয়া এবং ট্যুর ব্যবস্থাপনায় দক্ষ কোনো জনশক্তি গড়ে ওঠেনি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আগত পর্যটকদের স্থানীয় ট্যুর গাইড নেওয়ার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। তালিকাভুক্ত করা হয় ট্যুর গাইডদের। নির্ধারিত ফি প্রদানসাপেক্ষে এসব ট্যুর গাইডকে বিভিন্ন পয়েন্টে নিয়ে যেতে পারেন পর্যটকরা। তবে তালিকাভুক্ত এসব গাইডের জন্য ট্যুর অপারেশন, প্রাকৃতিক ঝুঁকি এড়ানো এবং উন্নত কমিউনিকেশন ধারণা বিষয়ে কোনো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়নি। ফলে বিপুল সংখ্যক যুবকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হলেও পর্যটকদের বিপদের সময় গাইডদের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের সেবা পাওয়া যায় না। ৯ জুন বান্দরবানের আলীকদমে প্রাকৃতিক দুর্যোগে তিন পর্যটক নিখোঁজ হলেও বিপদের সময় তারা কোনো সেবা বা পরামর্শ পাননি। ‘ট্যুর এক্সপার্ট’ নামের একটি অনলাইনভিত্তিক পর্যটন প্রতিষ্ঠান আয়োজিত এবারের ট্যুরে মোট ৩৩ জনকে আনলেও তাদের মধ্য থেকে তিনজনকে প্রাকৃতিক ঢলে নিখোঁজ হতে হয়েছে। এর মধ্যে শেখ জুবাইরুল ইসলাম ও স্মৃতি আকতারের লাশ পাওয়া গেলেও ট্যুর কো-হোস্ট হাসান শুভর এখনো কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় সূত্রগুলো অভিযোগ করেছে, প্রতিটি পর্যটক দল এবং প্রতিটি পয়েন্টে যাওয়ার জন্য একজন করে স্থানীয় ট্যুর গাইড নেওয়ার শর্ত আরোপ করা হলেও পর্যটকরা সে নিয়ম যথাযথভাবে পালন করছেন কি না তা তদারকির কোনো ব্যবস্থা নেই। এবারের ‘ট্যুর এক্সপার্ট’-এর ট্যুর প্রোগ্রামে দুটি গ্রুপের জন্য দুটি ভেন্যু নির্ধারিত থাকলেও ওই ট্যুর অপারেটর প্রতিষ্ঠান কৌশলে মাত্র একজন ট্যুর গাইডকে ভাড়া করে।
বান্দরবান জেলা সদর ছাড়াও রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি, লামা ও আলীকদমে ট্যুর গাইড অ্যাসোসিয়েশন গড়ে উঠেছে। এসব অ্যাসোসিয়েশনে ৮ থেকে ৯০০ ট্যুর গাইড তালিকাভুক্ত রয়েছে। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, তাদের কারোরই পর্যটনবিষয়ক কোনো প্রশিক্ষণ নেই। শুধু পেটের দায়ে তারা এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা পারিশ্রমিকের বিনিময়ে দূর-দূরান্তের দুর্গম স্পটে পর্যটকদের গাইড হয়ে তাদের সঙ্গে যাচ্ছেন।
খাগড়াছড়ি : খাগড়াছড়িতে অল্প কিছু পর্যটক ট্যুর অপারেটরের সহায়তায় আসেন। বিশেষ করে সাজেক পর্যটন স্পটে যাওয়ার জন্য ট্যুর অপারেটরদের সহায়তা নেন পর্যটকরা। এ ছাড়া অন্য পর্যটন স্পটগুলো নিজ উদ্যোগেই ঘুরে বেড়ান। ট্যুর অপারেটর গ্রুপের কার্যক্রম এ জেলায় তেমন একটা নেই।