‘নারীর ডাকে মৈত্রী যাত্রা’ কর্মসূচি থেকে নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা ও বৈষম্য কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন নারী নেত্রীরা। এতে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারকে তার সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করতে হবে, বিশেষত নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সহিংসতার হুমকি, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ঘিরে গুজব ও অপপ্রচার এবং ধর্মীয় মূল্যবোধকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে আতঙ্ক সৃষ্টির বিরুদ্ধে সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হবে। ঘোষণাপত্রটি পাঠ করেন জুলাই শহীদ পরিবারের তিনজন নারী সদস্য।
গতকাল বিকালে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে ‘নারীর ডাকে মৈত্রী যাত্রা’ শীর্ষক এ কর্মসূচি পালিত হয়। শ্রমিক, শিক্ষার্থী, সাংস্কৃতিক এবং প্রগতিশীল নারী পেশাজীবী সংগঠনগুলোর উদ্যোগে আয়োজিত কর্মসূচিতে নানান ব্যানার, লিফলেট, স্লোগান, গান ও কবিতার মাধ্যমে নারীর অধিকার ও বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের নারী সমাজের দাবি তুলে ধরা হয়। মৈত্রী যাত্রায় সংহতি জানান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ও দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভিন হক, সংগীতশিল্পী ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ নেত্রী মনীষা চক্রবর্তী, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহা মির্জা, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নোভা আহমেদ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাভিন মুরশিদ প্রমুখ।
ঘোষণায় আরও বলা হয়, সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর নারী নীতি ও অবস্থান আমরা নজরদারিতে রাখব। যারা ক্ষমতার কাঠামো ব্যবহার করে বৈষম্য ও সহিংসতা জিইয়ে রাখে, সেই কাঠামো ভেঙে দিতে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। হুমকির মুখে মাথা নত করব না এবং ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে পিছপা হব না। ঘোষণাপত্রে বলা হয়, আসন্ন নির্বাচনসহ ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে প্রার্থীদের মধ্যে অন্তত ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধি নিশ্চিত করতে হবে। নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। যারা নির্বাচনে অংশ নিতে চায় কিংবা সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দেয়, তাদের স্পষ্টভাবে জানাতে হবে- নারী, শ্রমিক, জাতিগত, ধর্মীয়, ভাষাগত ও লিঙ্গীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার ও মুক্তি সম্পর্কে তাদের অবস্থান কী?
ঘোষণায় আরও বলা হয়, জুলাইয়ের গণ অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে আজ আমরা এক জরুরি মুহূর্তে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। আমাদের দাবি একটি গণতান্ত্রিক ও ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশ, যেখানে বৈষম্যবিরোধিতা ও সাম্যের ভিত্তিতে সব নাগরিকের মর্যাদা এবং অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা ও বৈষম্য চালিয়ে যাওয়ার যে কোনো অপচেষ্টা আমরা মেনে নেব না। মৌলিক অধিকার অস্বীকারের ষড়যন্ত্র রুখে দাঁড়ানো হবে। বিভ্রান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির প্রয়াস, সংস্কৃতি ও ধর্মকে দমনমূলক অস্ত্রে পরিণত করার অপচেষ্টা এবং সংকীর্ণ মনোভাবকে সর্বজনীন করার প্রয়াস কঠোরভাবে প্রতিরোধ করা হবে।