সংশোধিত ওয়াক্ফ আইনের বিরোধিতায় প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ এবং পরবর্তী সহিংসতায় তিনজনের মৃত্যুর পর এখনো পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আগে থেকেই সেখানে মোতায়েন ছিল ৩০০ বিএসএফ জওয়ান। রাজ্য সরকারের অনুরোধে শনিবার অতিরিক্ত পাঁচ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দেয় কলকাতা হাই কোর্ট এবং রাত থেকেই ওই জেলার বেশ কিছু স্পর্শকাতর এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়। রাতভর সুতি, ধুলিয়ান, শামসেরগঞ্জ, জঙ্গিপুর এলাকায় উত্তেজনাপ্রবণ এলাকাগুলোতে টহল দেয় কেন্দ্রীয় বাহিনী, সঙ্গে ছিল রাজ্য পুলিশের সদস্যরাও।
গতকাল সকাল থেকেই রাজ্য পুলিশকে সঙ্গে নিয়েই ফের স্পর্শকাতর এলাকাগুলোতে ‘রুটমার্চ’ করে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সদস্যরা। ভুক্তভোগী মানুষদের সঙ্গে কথা বলে তাদেরকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। অশান্তি পাকানোর অভিযোগে সকালেও অতিরিক্ত ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সব মিলিয়ে এখনো পর্যন্ত ১৫০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এদিন সকালে দেখা যায়, মুর্শিদাবাদের অধিকাংশ এলাকায় থমথমে পরিবেশ, দোকানপাট বন্ধ, এমনকি রাস্তায় মানুষ, যানবাহনের চলাচলও কম। চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে ধ্বংসলীলার ছবি। তারই মাঝে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভারী বুটের শব্দ! এই আইনের প্রতিবাদ করে গত দুই দিন ধরে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ দেখিয়ে আসছেন মুসলিমরা। এরই মাঝে শুক্রবার জুমার নামাজের পর হঠাৎ করেই সহিংসতার চেহারা নেয় সেই বিক্ষোভ। পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ, চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ, সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস, বাড়িঘর লুটপাট, গুলি চালানোর মতো ঘটনা ঘটেছে। যাতে বেশ কয়েকজন আহত হয়। হামলার হাত থেকে বাদ যায়নি স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলামের বাড়িও। তার বাড়িতে ভাঙচুরের পাশাপাশি অগ্নিসংযোগ করা হয় বলে অভিযোগ।
এমনকি শনিবারও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ওই জেলার সুতি, শামশেরগঞ্জ থানা এলাকার একাধিক জায়গা- যেখানে মৃত্যু হয় তিনজনের। এর মধ্যে আবার নৃশংসভাবে কুপিয়ে খুন করা হয় বাবা ও ছেলেকে।
এই ঘটনার পরেই গ্রাম ছাড়তে শুরু করেন আতঙ্কিত মানুষরা। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সেই ছবিও ভাইরাল হয়। এমনকি ভিডিও পোস্ট করে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী জানান, ‘এ রাজ্যে হিন্দুরা মোটেই নিরাপদ নয়। প্রায় ৪০০-এর বেশি হিন্দু দলে দলে মুর্শিদাবাদ জেলার ধুলিয়ান পার্শ্ববর্তী মালদা জেলায় আশ্রয় নিচ্ছে। এ ঘটনায় তৃণমূল পরিচালিত সরকারের বিরুদ্ধে মুসলিম তোষণ নীতিকেই দায়ী করেছেন শুভেন্দু। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের দাবিও তোলেন তিনি।
বিজেপির সাবেক রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের অভিযোগ- ‘মমতা ব্যানার্জি মুসলিমদের রাস্তায় নামিয়ে উৎপাত করাচ্ছেন। ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি খাওয়ার যে পাপ- মুখ্যমন্ত্রী সেটা চাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এটা পশ্চিমবঙ্গের মানুষ ভুলবে না। হিন্দুদের ভয় দেখানোর চেষ্টা হচ্ছে। এ রাজ্যকে বাংলাদেশ বানানোর চক্রান্ত চলছে।’