ইসলামের দৃষ্টিতে অহেতুক কোনো মানুষকে কষ্ট দেওয়া, তার বিরুদ্ধাচরণ করা, ষড়যন্ত্র করা নিষেধ। এটা ঈমান পরিপন্থী কাজ। মুমিন যেমনই হোক, অন্যায়ভাবে তার ক্ষতি করে পার পাওয়ার সুযোগ নেই। যারা মুমিনকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়, তারা আল্লাহর দরবারে অভিশপ্ত হয়ে যায়।
হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের ক্ষতিসাধন করে অথবা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে, সে অভিশপ্ত। (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৪১)
অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, আবু সিরমা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অন্য কারো ক্ষতিসাধন করে, আল্লাহ তাআলা তা দিয়েই তার ক্ষতিসাধন করেন। যে ব্যক্তি অন্যকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাআলা তাকে কষ্টের মধ্যে ফেলেন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৪০)
শুধু মুমিনই নয়, শরিয়ত সমর্থিত যৌক্তিক কারণ ছাড়া অন্যায়ভাবে কোনো অমুসলিমকে কষ্ট দিলেও কিয়ামতের দিন কঠিন পরিস্থিতির শিকার হতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সাহাবিদের কিছু সন্তান তাঁদের পিতা সূত্র থেকে বর্ণিত, যাঁরা ছিলেন পরস্পর ঘনিষ্ঠ। তিনি বলেন, সাবধান! যে ব্যক্তি চুক্তিবদ্ধ (অমুসলিম) সম্প্রদায়ের কোনো ব্যক্তির ওপর জুলুম করবে বা তার প্রাপ্য কম দেবে কিংবা তাকে তার সামর্থ্যের বাইরে কিছু করতে বাধ্য করবে অথবা তার সন্তুষ্টিমূলক সম্মতি ছাড়া তার কাছ থেকে কিছু গ্রহণ করবে, কিয়ামতের দিন আমি তার বিপক্ষে বাদী হব। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩০৫২)
আর শত্রুতা যদি হয়, আল্লাহর কোনো বিশেষ বান্দার সঙ্গে, যার সঙ্গে আল্লাহর সম্পর্ক রয়েছে, যাকে দেখলে আল্লাহর কথা স্মরণ হয়, তবে তা আরো ভয়ংকর বিষয়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি আমার কোনো ওলির সঙ্গে দুশমনি রাখবে, আমি তার সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করব।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৫০২)
কোরআন-হাদিসের পরিভাষা অনুযায়ী আল্লাহর সেই বিশেষ বান্দা বা ওলি কারা, তাঁর পরিচয় মহান আল্লাহ নিজেই দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, জেনে রেখ, আল্লাহর ওলিদের কোনো ভয় নেই, আর তাঁরা পেরেশানও হবে না। ‘(তাঁরাই আল্লাহর ওলি) যাঁরা ইমান আনে এবং তাকওয়া (পরহেজগারি) অবলম্বন করে।’ (সুরা ইউনুস, আয়াত : ৬২-৬৩)
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের ওলি হলেন আল্লাহ, তাঁর রাসুল ও মুমিনরা, যাঁরা বিনয়াবনত হয়ে নামাজ আদায় করেন ও জাকাত দেন।’ (সুরা মায়েদা, আয়াত : ৫৫)
উপরোক্ত আয়াতে ঈমানদার ও মুত্তাকিদের আল্লাহর ওলি বলা হয়েছে। এ ছাড়া একাধিক হাদিসে ওলিদের পরিচয় দেওয়া হয়েছে। আসমা বিনতে ইয়াযিদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছেন, আমি কি তোমাদের মধ্যকার শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিদের কথা জানিয়ে দেব না? তাঁরা বলেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসুল! তিনি বলেন, তোমাদের মধ্যে তাঁরাই শ্রেষ্ঠ যাঁদের দেখলে মহান আল্লাহর স্মরণ হয়। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪১১৯)
অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে কিছু লোক এমন আছেন, যাঁরা নবীও নন, শহীদও নন। কিন্তু কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে তাঁদের মর্যাদা দেখে নবী ও শহীদরা তাঁদের ওপর ঈর্ষা করবেন।’ মহানবী (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করা হলো, ‘হে আল্লাহর রাসুল, তাঁরা কারা?’ জবাবে তিনি বলেন, ‘তারা সেসব লোক, যারা শুধু আল্লাহর জন্য একে অন্যকে ভালোবাসে। তাদের মধ্যে নেই কোনো আত্মীয়তার সম্পর্ক, নেই কোনো ধনসম্পদের সম্পর্ক। (কিয়ামতের দিন) তাদের চেহারা হবে নুরানি (উজ্জ্বল)। তারা নুরের মিম্বারের ওপর থাকবে। যখন মানুষ ভয় পায় তখন তারা ভয় পাবে না। যখন মানুষ দুঃখ পায় তখন তারা দুঃখ পাবে না।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৫২৭)
তাই কোনো মানুষকে কষ্ট দেওয়ার আগে শতবার এর পরিণাম সম্পর্কে ভাবা উচিত। বিশেষ করে যাঁরা আল্লাহর ইবাদত বন্দেগীতে যত্নবান, তাঁদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে অহেতুক বিপদ ডেকে আনা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। শরিয়ত সমর্থিত কারণ ছাড়া কোনো প্রাণীকেই কষ্ট দেওয়া উচিত নয়।
বিডি প্রতিদিন/নাজিম