ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলার পর বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় সব পক্ষকে আলোচনায় বসে শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্বনেতারা।
আলোচনা শুরুর আহ্বান জার্মান চ্যান্সেলরের : ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলার পর গতকাল নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রিসভার বৈঠক ডেকেছেন জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ ম্যার্ৎস। চ্যান্সেলরের মুখপাত্র স্টিফান কর্নেলিয়ুসের বলেছেন, ইরানকে ‘অবিলম্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনা শুরু করার এবং সংঘাতের একটি কূটনৈতিক সমাধানে আসার’ আহ্বান জানিয়েছেন ম্যার্ৎস। তিনি বলেন, জার্মান সরকার বিশ্বাস করে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির একটি বড় অংশ বিমান হামলায় প্রভাবিত হয়েছে। তবে তিনি আরও বলেন, এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণে আরও সময় লাগবে।
যুক্তরাজ্যের আহ্বান : ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ইরানকে আলোচনার টেবিলে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ফলে সৃষ্ট নিরাপত্তা হুমকি প্রশমনের জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে আমেরিকা।
এক্স অ্যাকাউন্টে তিনি লিখেছেন, ‘ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য একটি গুরুতর হুমকি’।
আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিয়ে উদ্বিগ্ন মধ্যপ্রাচ্য : হামলার ঘটনায় মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক স্থিতিশীলতায় কেমন প্রভাব তৈরি হতে পারে তা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে লেবানন এবং সৌদি আরব। লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নওয়াফ সালাম বলেছেন, তার দেশের ‘সর্বোচ্চ জাতীয় স্বার্থ’ হলো ‘যে কোনোভাবেই চলমান আঞ্চলিক সংঘাতে জড়িত না হওয়া।’ এক্স অ্যাকাউন্টে সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সৌদি আরব ‘ভ্রাতৃপ্রতিম ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের’ ওপর মার্কিন হামলাকে অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে।- এএফপি, বিবিসি
‘সংযম এবং উত্তেজনা এড়াতে সব ধরনের প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তার’ গুরুত্ব তুলে ধরেছে সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করার পদক্ষেপ নেওয়ার জোর আহ্বান জানিয়েছে দেশটি।
ইরানের ওপর মার্কিন হামলার নিন্দা জানিয়েছে ইরাক। দেশটি বলেছে, এ হামলা মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য একটি গুরুতর হুমকি এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য গুরুতর ঝুঁকি।
কাতার সতর্ক করে বলেছে, এ অঞ্চলে বিরাজমান পরিস্থিতি আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক স্তরে বিপর্যয়কর পরিণতি ডেকে আনতে পারে। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে বিচক্ষণতা, সংযম এবং আরও উত্তেজনা এড়াতে আহ্বান জানিয়েছে দোহার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এদিকে গত সপ্তাহে ইসরায়েলের হামলার আগে ওয়াশিংটন এবং তেহরানের মধ্যে পারমাণবিক আলোচনার মধ্যস্থতাকারী ওমান এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
পুনরায় আলোচনা শুরু করার আহ্বান ইইউর : যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের সব পক্ষকে পুনরায় আলোচনা শুরু করার আহ্বান জানিয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ কূটনীতিক কায়া কালাস। তিনি বেশ জোর দিয়ে বলেছেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করলে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে।
অন্যান্য দেশের প্রতিক্রিয়া :
ভেনেজুয়েলার সরকার ইরানে মার্কিন হামলার স্পষ্টভাবে নিন্দা জানিয়েছে। কিউবার প্রেসিডেন্ট মিগুয়েল ডায়াজ-ক্যানেল এ হামলার তীব্র বিরোধিতা করেছেন। নিউজিল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইনস্টন পিটার্স চলমান উত্তেজনাকে এমন একটি সংকটের সঙ্গে তুলনা করেছেন, যা তার দেখা সবচেয়ে গুরুতর।
অস্ট্রেলিয়ান সরকার জানিয়েছে, তারা উত্তেজনা কমানো, সংলাপ এবং কূটনীতির আহ্বান অব্যাহত রাখবে। এএফপি, বিবিসি