ভারতের গুজরাটের আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের সম্ভাব্য কারণ নিয়ে ভারতের এক বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, উড়োজাহাজটি উড্ডয়ন করার সঙ্গে সঙ্গে সম্ভবত এটিতে কয়েকটি পাখি আঘাত হেনেছিল। এতে করে পূর্ণ উড্ডয়নের জন্য যে পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন ছিল উড়োজাহাজটি সেটি হারিয়ে ফেলেছিল। ফলে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও উড়োজাহাজটি আর ওপরের দিকে নিতে পারেননি পাইলট।
ভয়াবহ এ দুর্ঘটনার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এতে দেখা গেছে, বিমানবন্দরের রানওয়ে থেকে উড্ডয়নের পর অনেকটা দুলতে দুলতে উড়োজাহাজটি এগিয়ে যাচ্ছে। এর কিছুক্ষণ পরই এটি বিধ্বস্ত হয়। এয়ার ইন্ডিয়ার এ উড়োজাহাজটি সেখানকার একটি মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাসে আঘাত হানে।
বিধ্বস্তের কারণ নিয়ে সাবেক ক্যাপ্টেন সৌরভ ভাটনাগর নামের এ বিশেষজ্ঞ বলেছেন, ‘প্রথমত মনে হচ্ছে-একাধিক পাখির ধাক্কায় দুটি ইঞ্জিনই বিকল হয়ে যায়। উড্ডয়নটি নিখুঁত ছিল। কিন্তু ল্যান্ডিং গিয়ারটি ওপরে তোলার আগেই উড়োজাহাজটি নিচে নামা শুরু করে। এমনটি সাধারণত হয় যখন ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায় অথবা উড়োজাহাজ আকাশে থাকার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলে। তদন্তে আসল কারণ বেরিয়ে আসবে।’ তিনি আরও বলেন, “ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে-উড্ডয়নটি বেশ সুন্দরভাবে হয়েছিল। এ ছাড়া উড়োজাহাজটিও নিয়ন্ত্রিতভাবে নিচে নেমে আসে। পাইলট ‘মে ডে কল’ করেছিলেন। যার অর্থ ওই সময় জরুরি পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল।”
প্রশ্নের মুখে এয়ার ইন্ডিয়ার সুরক্ষা : ভারতের সরকারি পতাকাবাহী উড়োজাহাজ সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়া গত ১৫ বছরে একাধিক ঝুঁকিপূর্ণ ঘটনার মুখোমুখি হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সংস্থাটি তাদের নিরাপত্তা রেকর্ড উন্নত করার চেষ্টা করেছে বলে জানানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবারের (১২ জুন) আগে এয়ার ইন্ডিয়ার সবশেষ বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছিল ২০২০ সালে। সে সময় তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের একটি ফ্লাইট কেরালার কোঝিকোড় বিমানবন্দরে বৃষ্টিভেজা রানওয়েতে অবতরণের সময় ছিটকে গিয়ে দুই ভাগ হয়ে যায়। এতে অন্তত ১৭ জনের মৃত্যু হয়। ঘটনার সময় আবহাওয়া ছিল অত্যন্ত খারাপ এবং দৃষ্টিসীমাও ছিল কম।
এর এক দশক আগে ২০১০ সালে আরও ভয়াবহ এক দুর্ঘটনায় পড়েছিল এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের একটি প্লেন। সেটি কর্ণাটকের ম্যাঙ্গালুরু শহরের বিমানবন্দরে অবতরণের সময় রানওয়ে ছাড়িয়ে একটি ঢালে পড়ে আগুন ধরে যায়। ওই ঘটনায় ১৫০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারান।
২০০৯ সালে মুম্বাই বিমানবন্দরে মাত্র এক বছরের মধ্যে তিনটি ‘নিয়ার-মিস’ ঘটনা ঘটে, যা ভারতের দ্রুত সম্প্রসারিত বিমান পরিবহন খাতের নিরাপত্তা নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি করে। একই সময় এয়ার ইন্ডিয়ার অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ও পেশাদারি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল।
একটি ঘটনায় দেখা যায়, পাইলট ও কেবিন ক্রুদের মধ্যে ঝগড়ার সময় একটি প্লেন কয়েক মিনিট ধরে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে আকাশে উড়ছিল। আরেকবার একটি পুরো উড়োজাহাজে ইঁদুর খোঁজার জন্য ফ্লাইট ১১ ঘণ্টা দেরিতে ছাড়ে। টাইমস অব ইন্ডিয়
এ ঘটনাগুলো এয়ার ইন্ডিয়ার অতীত নিরাপত্তা রেকর্ডে কালো দাগ হয়ে রয়েছে, যদিও সংস্থাটি সম্প্রতি তাদের মানোন্নয়নের নানা উদ্যোগ নিয়েছে, বিশেষ করে টাটা গোষ্ঠীর মালিকানায় আসার পর। তবু ২০২৫ সালের ১২ জুন আহমেদাবাদ দুর্ঘটনা নতুন করে নিরাপত্তা ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। সূত্র : দ্য নিউইয়র্ক টাইমস