বিশ্বজুড়ে কফিপ্রেমীদের কাছে স্টারবাকস একটি পরিচিত নাম। সেই আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের বিরুদ্ধেই আইনি লড়াইয়ে জিতে এখন আলোচনার কেন্দ্রে পাকিস্তানের করাচির একটি ছোট ক্যাফে—‘সাত্তার বকশ’। নাম ও লোগো ঘিরে শুরু হওয়া এই বিরোধ পরিণত হয় দীর্ঘ ১২ বছরের আইনি লড়াইয়ে, যার রায়ে জয় পেল স্থানীয় এই ব্যতিক্রমী প্রতিষ্ঠানটি।
প্রথম দেখায় ‘সাত্তার বকশ’-এর লোগোটি স্টারবাকসের বিখ্যাত মারমেইড লোগোর সঙ্গে মিল থাকলেও এতে রয়েছে সূক্ষ্ম পার্থক্য। সবুজ বৃত্তের মাঝখানে এখানে কোনো মারমেইড নয়, বরং গোঁফওয়ালা এক পুরুষের ছবি। নামটিও এক ধরনের শব্দচাতুর্য, যা ‘স্টারবাকস’-এর প্রতি ইঙ্গিতপূর্ণ হলেও স্থানীয় সংস্কৃতির সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। ‘সাত্তার’ পাকিস্তানের একটি প্রচলিত নাম এবং ‘বকশ’ অর্থ ‘সেবক’। গোঁফ এখানে পুরুষত্ব এবং ব্যঙ্গের প্রতীক হিসেবেও দেখা হয়।
বিতর্কের শুরু যেভাবে
২০১৩ সালে করাচির বিজ্ঞাপন জগতের দুই উদ্যোক্তা—রিজওয়ান আহমেদ মালিক ও আদনান ইউসুফ—ক্যাফেটি চালু করেন। করাচির অভিজাত এলাকা ক্লিফটনের ব্লকে তাদের প্রথম শাখা দ্রুতই শহরের ধনী ও ট্রেন্ডি তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
ক্যাফেটির মেনুতে রয়েছে স্থানীয় ও পশ্চিমা স্বাদের দারুণ মিশেল—‘বান কাবাব’, ‘গোলাপ জামুন’ থেকে শুরু করে ‘বার্গার’ ও ‘পিৎজা’ পর্যন্ত সবই মেলে। এমনকি ‘ঝিংগা লা-লা’ ও ‘বে-শরম বার্গার’-এর মতো রসিকতাপূর্ণ নামও আছে মেনুতে।
তবে জনপ্রিয়তা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই নজরে পড়ে স্টারবাকস করপোরেশনের। প্রতিষ্ঠানটি অভিযোগ তোলে, ‘সাত্তার বকশ’-এর নাম ও লোগো তাদের ট্রেডমার্কের স্বকীয়তা ক্ষুণ্ন করছে এবং ভোক্তারা বিভ্রান্ত হতে পারেন।
আইনি লড়াইয়ের ১২ বছর
স্টারবাকস পাকিস্তানের ট্রেডমার্ক আইনের ‘বিভ্রান্তিকর সাদৃশ্য’ এবং ‘ক্ষয়সাধন’-সংক্রান্ত ধারার আওতায় অভিযোগ আনে। অন্যদিকে, ‘সাত্তার বকশ’ কর্তৃপক্ষ বরাবরই দাবি করে, এটি কোনো অনুকরণ নয়, বরং প্যারোডি ও স্থানীয় সংস্কৃতির ব্যঙ্গাত্মক উপস্থাপন।
ক্যাফের সহ-প্রতিষ্ঠাতা রিজওয়ান আহমেদ মালিক জানান, লোগো ও ব্র্যান্ডিংয়ে সচেতনভাবে পার্থক্য রাখা হয়েছে—যেমন গোঁফওয়ালা চরিত্র, ভিন্ন ফন্ট, এবং রঙের ব্যবহার। পাশাপাশি, তারা দ্রুত ডিসক্লেইমার যুক্ত করে জানায়, তাদের সঙ্গে স্টারবাকসের কোনো সম্পর্ক নেই।
দীর্ঘ এক দশকের বেশি সময় ধরে চলা এই আইনি লড়াই শেষে অবশেষে ‘সাত্তার বকশ’ নিজেদের পক্ষে রায় পায়। যদিও এর ফলে ক্যাফেটিকে তাদের ভিজ্যুয়াল আইডেন্টিটিতে কিছু পরিবর্তন আনতে হয়েছে, তবে নামটি অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
‘সাত্তার বকশ’-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর আরমাঘান শহীদ বলেন, স্টারবাকস আমাদের ব্যবসা বন্ধ করতে কঠোর চেষ্টা করেছিল, কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে। আমাদের মেনু, কনসেপ্ট ও গ্রাহক অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। আমরা স্থানীয় স্বাদ ও রসবোধ তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
এই পুরো ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়। পাকিস্তানের দেশি ধাঁচের প্যারোডি হিসেবে ‘সাত্তার বকশ’-এর সাফল্য নিয়ে তৈরি হয়েছে অসংখ্য মিম, রসিকতা ও আলোচনা। অনেকেই বলছেন, এটি শুধুই একটি আইনি লড়াই নয়, বরং ব্র্যান্ডিং, সংস্কৃতি ও স্বাধীন সৃজনশীলতার একটি অনন্য উদাহরণ।
তথ্যসূত্র : গালফ নিউজ।
বিডি-প্রতিদিন/শআ