ইসরায়েলের কঠোর অবরোধ ভেঙে গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছানো এবং ফিলিস্তিনিদের দুর্দশার দিকে বিশ্ববাসীর মনোযোগ আকর্ষণের লক্ষ্যে যাত্রা শুরু করেছে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা। আয়োজকরা শুক্রবার জানিয়েছেন, ভূমধ্যসাগরের মেনোর্কা থেকে বহরটি যাত্রা করে এখন তিউনিসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
ফ্লোটিলার সমন্বয়কারী জোটের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অধিকাংশ জাহাজই এখন তিউনিসের পথে রয়েছে। আরও কিছু জাহাজ, যার মধ্যে বার্সেলোনায় ঝড়ের কারণে মেরামতের জন্য থাকা দুটি নৌকাও রয়েছে, তারা দ্রুত বহরে যোগ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পরবর্তী ধাপের যাত্রার আগে জাহাজগুলোর নিরাপত্তা ও অন্যান্য পরিচালনগত দিকগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আগামী ৭ই সেপ্টেম্বর সিসিলির কাতানিয়া এবং তিউনিসের বন্দর থেকে আরও ডজনখানেক জাহাজ এই বহরে যোগ দেবে। আয়োজকরা এই সম্মিলিত উদ্যোগকে ইসরায়েলি অবরোধের বিরুদ্ধে একটি ‘শক্তিশালী, ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
এই মানবিক উদ্যোগটি বিশ্বজুড়ে ব্যাপক সমর্থন লাভ করেছে, যার মধ্যে রয়েছেন বহু আইনপ্রণেতা, শ্রমিক ইউনিয়ন এবং মানবাধিকার কর্মী। শতাধিক বর্তমান ও প্রাক্তন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি একটি যৌথ চিঠিতে গাজায় মানবিক করিডর তৈরি, বেসামরিক মিশনকে সুরক্ষা দেওয়া এবং আন্তর্জাতিক আইন সমুন্নত রাখার জন্য জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে জাতিসংঘের বিশেষ দূত ফ্রান্সেসকা আলবানিজ বলেছেন, এই মিশনটি ‘আন্তর্জাতিক আইন মেনে সম্পূর্ণভাবে পরিচালিত হচ্ছে’। জেনোয়া বন্দরের ইতালীয় ডকশ্রমিকরাও ঘোষণা দিয়েছেন, যদি এই ফ্লোটিলার পথ আটকানো হয়, তবে তারা ইসরায়েলে সমস্ত জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দেবেন।
কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো এই অভিযানের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, আপনারা সবচেয়ে কঠিন এবং বিপজ্জনক পথটি বেছে নিয়েছেন: বর্বর সহিংসতার মুখেও কাজ করে যাওয়া। আমরা আপনাদের এই সাহসী যাত্রায় শক্তি ও জীবন পাঠাচ্ছি।
আয়োজকরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং জাতিসংঘ সংস্থাগুলোর কাছে ফ্লোটিলার নিরাপদ পথ নিশ্চিত করার, অংশগ্রহণকারীদের অবৈধ আটক থেকে রক্ষা করার এবং ফিলিস্তিনিদের মানবিক সমুদ্রপথের অধিকারকে সমর্থন করার আহ্বান জানিয়েছেন।
তারা গাজায় ইসরায়েলের অবরোধের অবসানও দাবি করেছেন, যা তারা ‘ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর চলমান গণহত্যার’ অংশ বলে উল্লেখ করেছেন।
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা জানিয়েছে, এই অভিযান কোনো সরকার বা কর্পোরেশন থেকে অর্থায়িত নয় বরং বিশ্বজুড়ে সাধারণ পরিবার, সম্প্রদায় এবং তৃণমূল পর্যায়ের সংগঠনগুলোর অনুদানে এটি পরিচালিত হচ্ছে।
এক বিবৃতিতে তারা বলেন, আমাদের জোটে ডাক্তার, মানবতাবাদী, কর্মী, আইনজীবী, শিল্পী এবং সাধারণ মানুষ রয়েছেন, যারা একটি সাধারণ বিশ্বাসে ঐক্যবদ্ধ: ফিলিস্তিনিদের মর্যাদার সাথে, স্বাধীনতা এবং মানবিকতার সাথে বেঁচে থাকার অধিকার আছে।
ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে গাজায় চলমান গণহত্যা আজ ৭০০তম দিনে প্রবেশ করেছে। এই সময়ে ইসরায়েলের হামলায় ৬৪,২০০ এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজার পরিস্থিতি এখন দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল