ইউক্রেন ইস্যুতে নতুন করে উত্তপ্ত হচ্ছে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি। সম্প্রতি প্যারিসে অনুষ্ঠিত এক শীর্ষ সম্মেলনে ইউক্রেনের মিত্ররা যুদ্ধবিরতির পর সেখানে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেনা পাঠানোর বিষয়ে একমত হয়েছে। তবে এই পদক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ইউক্রেনের মাটিতে কোনো পশ্চিমা সৈন্যের উপস্থিতি রাশিয়ার জন্য বৈধ লক্ষ্যবস্তু বলে বিবেচিত হবে।
প্যারিসে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ঘোষণা দেন ইউক্রেনের ২৬টি মিত্র দেশ যুদ্ধবিরতির পরপরই স্থল, সমুদ্র বা আকাশপথে সেনা মোতায়েন করতে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মত হয়েছে। এই সেনারা সম্মুখ সমরে লড়াই করবে না বরং তাদের মূল উদ্দেশ্য হবে ভবিষ্যতে যেকোনো নতুন আগ্রাসন প্রতিরোধ করা। ম্যাক্রোঁ স্পষ্ট করে বলেছেন, এই বাহিনীর উদ্দেশ্য রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা নয়। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এই সিদ্ধান্তকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ হিসেবে স্বাগত জানিয়েছেন।
তবে ভ্লাদিমির পুতিন আজ একটি অর্থনৈতিক ফোরামে যোগ দিয়ে পশ্চিমা পরিকল্পনার তীব্র নিন্দা জানান। তিনি বলেন, যদি এমন কোনো সিদ্ধান্ত হয়, যা দীর্ঘমেয়াদি শান্তির দিকে নিয়ে যায়, তাহলে আমি বিদেশি সেনাদের উপস্থিতির কোনো কারণ দেখি না। একই সঙ্গে তিনি সতর্ক করে দেন ইউক্রেনে যেকোনো আন্তর্জাতিক বাহিনীর উপস্থিতি রাশিয়ার জন্য বৈধ লক্ষ্যবস্তু হবে, কারণ রাশিয়া ন্যাটো জোটকে নিজেদের শত্রু মনে করে।
হোয়াইট হাউস এখনো ইউক্রেনে তাদের সেনাদের ভূমিকার বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন যে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন সম্ভবত বিমান সহায়তা হিসেবে আসতে পারে। ট্রাম্প বলেছেন, তিনি পুতিনের সঙ্গে খুব ভালো আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং অদূর ভবিষ্যতে তাদের মধ্যে কথা হতে পারে।
এদিকে, ইউক্রেন চাইছে প্রথমে একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হোক এবং তারপর একটি পূর্ণাঙ্গ শান্তিচুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু হোক। অন্যদিকে, রাশিয়া জোর দিয়ে বলছে, প্রথমে একটি চূড়ান্ত শান্তিচুক্তি সই হতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ইউক্রেন ও তার পশ্চিমা মিত্ররা পুতিনের এই কথায় খুব বেশি আশ্বস্ত হবে না। কারণ, পশ্চিমারা মনে করে, রাশিয়া আসলে সময়ক্ষেপণ করছে এবং যুদ্ধের মাধ্যমে আরও বেশি ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড দখল করতে চাইছে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, দুই কোরিয়ার সীমান্ত রেখার মতো একটি পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, যেখানে একটি শক্তিশালী আন্তর্জাতিক বাহিনী যুদ্ধবিরতি কার্যকর করে শান্তি বজায় রাখবে। তবে আপাতত, উভয় পক্ষই তাদের নিজ নিজ অবস্থানে অনড় থাকায় শান্তি প্রক্রিয়া খুব একটা এগোচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না।
সূত্র: বিবিসি
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল