রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধ না করলে ভারতের ওপর আরও কড়া নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে—এমনই ইঙ্গিত দিলেন আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
বুধবার ভারতীয় পণ্যের উপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার পর এই মন্তব্য করেন তিনি। এর ফলে আমেরিকায় ভারতীয় পণ্যে মোট শুল্কের হার দাঁড়াল ৫০ শতাংশে, যা দেশটিকে আমেরিকার ‘সর্বোচ্চ শুল্কযুক্ত’ দেশের তালিকায় এনে ফেলেছে।
ট্রাম্পের বক্তব্যে স্পষ্ট, রাশিয়া থেকে তেল কেনা অব্যাহত রাখলে ভারতকে চড়া মূল্য দিতে হতে পারে। হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ট্রাম্প বলেন, মাত্র ৮ ঘণ্টা হয়েছে শুল্ক আরোপের। দেখুন না, এরপর কী হয়। আপনারা আরও অনেক নিষেধাজ্ঞা দেখতে পাবেন।
প্রশ্ন উঠেছে, রাশিয়া থেকে চীনও বিপুল পরিমাণে তেল আমদানি করে, অথচ ভারতের ক্ষেত্রেই কেন এই কড়া পদক্ষেপ? ট্রাম্প সরাসরি উত্তর না দিলেও তার দলের মধ্যেই এই ‘দ্বৈত নীতি’ নিয়ে অসন্তোষ স্পষ্ট। রিপাবলিকান নেত্রী নিকি হ্যালে বলেন, ভারতের তেল আমদানি নিয়ে উদ্বেগ থাকতেই পারে। কিন্তু চীন রাশিয়া এবং ইরান থেকে সবচেয়ে বেশি তেল কেনে—তাদের ৯০ দিনের শুল্ক-ছাড় দেওয়া হচ্ছে! এটা অনুচিত। পাশাপাশি তিনি সতর্ক করেন, চীনের মতো প্রতিদ্বন্দ্বীকে সুবিধা না দিয়ে ভারতের মতো মিত্র দেশের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করাই যুক্তিযুক্ত।
ট্রাম্পের ঘোষণার পরই নয়াদিল্লি কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়ে জানায়, ভারতের তেল আমদানি বাজারের পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে। বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতিতে বলা হয়, রাশিয়া তুলনামূলকভাবে সস্তায় তেল সরবরাহ করছে, তাই জাতীয় স্বার্থে ভারত তা আমদানি করছে। অনেক দেশই একই পথে হাঁটছে। তাহলে শুধুমাত্র ভারতকে টার্গেট করা অন্যায্য।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আমেরিকার এই সিদ্ধান্ত দুর্ভাগ্যজনক, অযৌক্তিক ও অনর্থক। আমরা এর প্রতিবাদ করছি। ভারত তার ১৪০ কোটির বেশি মানুষের জ্বালানির নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষায় ভারত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পদক্ষেপ শুধুই বাণিজ্যিক নয়, এর নেপথ্যে রয়েছে ভূ-রাজনৈতিক চাপের কৌশল। ওয়াশিংটনের মতে, রাশিয়া থেকে ভারতের তেল আমদানির অর্থ ব্যবহার করা হচ্ছে ইউক্রেনে যুদ্ধ চালানোর জন্য। যদিও নয়াদিল্লি এমন যুক্তিকে মানতে নারাজ।
বুধবারের শুল্ক বৃদ্ধি কার্যকর হবে ২৭ আগস্ট থেকে। এর আগেই গত জুনে ২৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা ছিল ৭ আগস্ট থেকে। একই সঙ্গে ব্রাজিলের উপরেও ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছে আমেরিকা, যা নির্দেশ করে এই পদক্ষেপের একটি বড় কৌশলগত প্রেক্ষাপট রয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল