একদিকে রুদ্ররোষে জ্বলছে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনাম, অন্যদিকে চীন, পাকিস্তান ও ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে চলছে টানা বর্ষণ ও ভয়াবহ বন্যা।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এই চরম আবহাওয়ার ঘটনা আগের চেয়ে অনেক বেশি ঘনঘন, তীব্র ও অপ্রত্যাশিতভাবে ঘটছে।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (ডব্লিউএমও) তথ্য অনুযায়ী, এশিয়া বিশ্ব গড়ের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হারে উষ্ণ হয়ে উঠছে। গত তিন দশকে এই অঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার।
রেকর্ড গরমে পুড়ছে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া
মঙ্গলবার জাপানের ইসেসাকি শহরে তাপমাত্রা পৌঁছেছে ৪১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। দেশটির ইতিহাসে এটি সর্বোচ্চ রেকর্ড। এর আগে জুন ও জুলাই মাসেও রেকর্ড গরম অনুভূত হয়।
মধ্য-জুন থেকে জুলাইয়ের শেষ পর্যন্ত হিটস্ট্রোকে অন্তত ৫৬ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে টোকিওর চিকিৎসা বিভাগের কর্মকর্তারা। চরম গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় কিছু ট্রেন চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার অবস্থা ভিন্ন নয়। জুলাই মাসে টানা ২২টি রাতে তাপমাত্রা ছিল ২৫ ডিগ্রির উপরে, যা রেকর্ড ‘ট্রপিক্যাল নাইট’। এতে হিটস্ট্রোক ও ডিহাইড্রেশনের ঘটনা ব্যাপক হারে বেড়েছে। সরকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পোশাকের নিয়ম শিথিল করেছে, যেন শীতাতপ নিয়ন্ত্রণে নির্ভরতা কমে।
ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয় এই আগস্টে প্রথমবারের মতো ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের গরমে পুড়েছে। এক নির্মাণ শ্রমিক জানান, পুরো শহরটাই যেন আগুনের কড়াই।
চীনে বৃষ্টি-বন্যার তাণ্ডব
জাপান-কোরিয়ার উল্টো চিত্র চীনে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বেইজিং থেকে সাংহাই পর্যন্ত টানা বৃষ্টি ও বন্যায় বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।
দক্ষিণ চীনের গুয়াংডং প্রদেশে বৃষ্টি ও বন্যার সঙ্গে ছড়াচ্ছে মশাবাহিত চিকুনগুনিয়া রোগ। মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে বেইজিংয়ের পার্বত্য এলাকায় হঠাৎ বন্যায় প্রাণ গেছে বহু মানুষের—শুধুমাত্র একটি প্রবীণ নিবাসেই প্রাণ হারিয়েছেন ৩১ জন।
চীনের আবহাওয়া সংস্থা জানিয়েছে, এক মাস আগেও যখন ঝড়-জলোচ্ছ্বাস প্রায় ছিল না বললেই চলে, তখন গত সপ্তাহেই পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে একযোগে তিনটি সক্রিয় ঝড় দেখা যায়।
হংকং-এ মঙ্গলবার একদিনেই ৩৫০ মিমি বৃষ্টি হয়েছে, যা ১৮৮৪ সালের পর আগস্ট মাসে সর্বোচ্চ। উল্লেখ্য, শহরটি বছরে মোট গড়ে ২৪০০ মিমি বৃষ্টি পায়।
ভারত-পাকিস্তানে বৃষ্টি ও প্রাণহানি
ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যে আকস্মিক মেঘভাঙা বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যায় নিখোঁজ শতাধিক মানুষ। পাহাড়ি এলাকায় হঠাৎ জলঢল ও ভূমিধসে ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হয়েছে।
পাকিস্তানে জুন থেকে এ পর্যন্ত বৃষ্টিজনিত দুর্ঘটনায় ৩০০ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে শতাধিক শিশু। বন্যায় ধ্বংস হয়েছে বহু ঘরবাড়ি ও অবকাঠামো। ব্রিটিশ সাহায্য সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন জানিয়েছে, পাঞ্জাব প্রদেশে প্রায় এক চতুর্থাংশ স্কুল আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যতদিন না জলবায়ু পরিবর্তনের মূল কারণগুলো যেমন জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার, বন উজাড় ও অতিমাত্রায় নগরায়ন নিয়ন্ত্রণে না আনা যায়, ততোদিন এই ধরনের চরম আবহাওয়ার ঝুঁকি ও প্রাণহানি বাড়তেই থাকবে।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল