পেরুর উত্তরাঞ্চলীয় বারাঙ্কা প্রদেশে প্রত্নতাত্ত্বিকরা ৩৫০০ বছরের পুরনো একটি প্রাচীন শহরের সন্ধান পাওয়ার দাবি করেছেন। এই শহরটির নাম দেওয়া হয়েছে পেনিকো। খবর বিবিসি।
ধারণা করা হচ্ছে, পেনিকো একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে কাজ করত, যা প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলের আদি জনগোষ্ঠীগুলোকে আন্দিজ পর্বতমালা এবং আমাজন অববাহিকার বাসিন্দাদের সাথে সংযুক্ত করত। গবেষকরা বলছেন, এই আবিষ্কার আমেরিকার প্রাচীনতম সভ্যতা কারাল'কে নতুন করে জানতে সাহায্য করবে।
পেরুর রাজধানী লিমা থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার উত্তরে এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৬০০ মিটার (১৯৭০ ফুট) উচ্চতায় অবস্থিত এই স্থানটি ১৮০০ থেকে ১৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বলে মনে করা হয়। এটি সেই সময়কার যখন মধ্যপ্রাচ্য এবং এশিয়ায় প্রাথমিক সভ্যতাগুলো বিকাশ লাভ করছিল।
পেনিকো সেই কারাল সভ্যতার কাছাকাছি অবস্থিত, যা ৫০০০ বছর আগে প্রায় ৩০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে পেরুর সুপে উপত্যকায় আমেরিকার প্রাচীনতম জ্ঞাত সভ্যতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কারাল-এ ৩২টি স্মৃতিস্তম্ভ, বিশাল পিরামিড কাঠামো, উন্নত সেচভিত্তিক কৃষি এবং শহুরে বসতি ছিল। এটি ভারত, মিশর, সুমেরিয়া এবং চীনের অন্যান্য তুলনামূলক প্রাথমিক সভ্যতা থেকে বিচ্ছিন্নভাবে বিকশিত হয়েছিল বলে মনে করা হয়।
গবেষকদের প্রকাশিত ড্রোন ফুটেজে শহরের কেন্দ্রে একটি পাহাড়ের সোপানে একটি বৃত্তাকার কাঠামো দেখা যায়, যা পাথর ও কাদামাটির তৈরি ভবনের অবশেষ দ্বারা বেষ্টিত। আট বছরের গবেষণায় এই স্থান থেকে ১৮টি কাঠামো উন্মোচন করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে আনুষ্ঠানিক মন্দির এবং আবাসিক কমপ্লেক্স। ভবনগুলো থেকে গবেষকরা আনুষ্ঠানিক বস্তু, মানব ও পশুর মাটির ভাস্কর্য এবং পুঁতি ও ঝিনুকের তৈরি নেকলেস আবিষ্কার করেছেন।
প্রত্নতাত্ত্বিক ড. রুথ শ্যাডি, যিনি পেনিকো নিয়ে সাম্প্রতিক গবেষণা এবং ১৯৯০-এর দশকে কারালের খননের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন, এই আবিষ্কার কারাল সভ্যতা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ধ্বংস হওয়ার পর কী হয়েছিল, তা বোঝার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। রয়টার্স নিউজ এজেন্সিকে ড. শ্যাডি বলেন, পেনিকো সম্প্রদায় বাণিজ্য এবং উপকূল, উচ্চভূমি ও জঙ্গলের সমাজগুলোর সাথে বিনিময়ের জন্য একটি কৌশলগত অবস্থানে অবস্থিত ছিল। পেরুর সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের গবেষক প্রত্নতাত্ত্বিক মার্কো মাচাকুয়ায় একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, পেনিকোর তাৎপর্য হলো এটি কারাল সমাজের একটি ধারাবাহিকতা।
পেরুর প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব: পেরু আমেরিকার অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারের আবাসস্থল, যার মধ্যে আন্দিজের ইনকা দুর্গ মাচু পিচু এবং মধ্য উপকূল বরাবর মরুভূমিতে খোদাই করা রহস্যময় নাজকা লাইন রয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল