ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষিত নতুন শুল্কনীতির কারণে সৃষ্ট সংকট মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রকে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা দিচ্ছে বাংলাদেশ। এ প্রস্তাবনা পাঠানোর পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈঠক করবে ঢাকা। প্রস্তাবগুলোর মধ্যে (ননট্যারিফ ব্যারিয়ার দূর (অশুল্ক বাধা), আমদানি বৃদ্ধি ও মার্কিন পণ্যের শুল্ক শূন্যে নামিয়ে আনার বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প ৯০ দিনের সুবিধা দিয়েছেন, আমরা এই সময়ে আলোচনা সম্পন্ন করতে চাই। এ জন্য আমরা সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় ‘তিনটি বিষয় গুরুত্ব পাবে। প্রথমত, ননট্যারিফ ব্যারিয়ার (অশুল্ক বাধা) দূর করা। দ্বিতীয়ত, বেসরকারি খাত যেন বেশি আমদানি করে বিশেষ করে তুলা, সে জন্য ব্যবসায়ীদের উৎসাহ দেওয়া। তৃতীয়ত, মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক কমানো বা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এসব কিছুর সঙ্গে শ্রম খাতের সংস্কার, মেধাস্বত্ব অধিকার, ডিজিটাল অর্থনীতিসহ অন্যান্য বিষয়ও থাকবে।’ ওয়াশিংটন ও ঢাকার মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ে কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। সর্বশেষ ২৩ এপ্রিল বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী। ওই বৈঠকে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশের কাছ থেকে সুস্পষ্ট প্রস্তাবনা চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এসব প্রস্তাবনা দেওয়ার পর আলোচনা শুরু হবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এবং ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। কারণ দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি অল্প সময়ের মধ্যে দূর হয়ে যাবে যুক্তরাষ্ট্র এমন ধারণা পোষণ করে না। তবে তারা দেখতে চায়, বাংলাদেশ বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর জন্য দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্র যার সুফল পাচ্ছে। তারা আরও বলেন, এখানে আরেকটি বিষয় আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে বলেছি এবং আবারও বলব। সেটা হলো আলোচনায় শুধু পণ্য নিয়ে কথা হচ্ছে। কিন্তু সেবা খাতে আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে প্রচুর পরিমাণ অর্থ দিয়ে থাকি। সেটিও যেন তারা বিবেচনায় নেওয়ার অনুরোধ করা হবে।’ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, অন্য দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনা শুরু হয়েছে। ভারত একটি সমঝোতা প্রায় চূড়ান্ত করেছে। দক্ষিণ কোরিয়া প্রস্তাবনা জমা দিয়েছে। এ ছাড়া আলোচনা অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছে জাপান। মার্কিন পণ্য আমদানিতে শুল্ক ও অশুল্ক বাধা দূর করা এবং বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে বাংলাদেশ কী কী পদক্ষেপ নিতে চায়, তা জানতে চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গত ৯ এপ্রিল দেশটির বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) দপ্তরের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কর্মপরিকল্পনা জানাতে বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছে। ওই ভার্চুয়াল বৈঠকে উপস্থিত বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত তিন মাসের জন্য স্থগিত করার আগেই ইউএসটিআরের সঙ্গে আমাদের বৈঠকটি হয়েছে। সেখানে অশুল্ক বাধা সব দূর করার চেষ্টার কথা তাদের বলেছি।’ তিনি বলেন, ‘গত টিকফা (বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তি) বৈঠকে আমাদের দিক থেকে যা যা করার আলোচনা উঠেছিল, সেগুলোর হালনাগাদ চিত্র তারা জানতে চেয়েছে। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের ওপর ৯ এপ্রিল থেকে বিভিন্নহারে পাল্টা শুল্ক আরোপ করার ঘোষণা দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরপর বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে এবং আলোচনা করার জন্য চীন ব্যতীত সংশ্লিষ্ট দেশের ওপর আরোপিত শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করে যুক্তরাষ্ট্র।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যে শুল্ক আদায় হয়েছে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। যা ওই সময়ে পৃথিবীর সব দেশের আমদানি থেকে আদায় করা মোট রাজস্বের ২ শতাংশেরও কম। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য বলছে এই নয় মাসে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২২ হাজার ১৬৮ কোটি টাকার পণ্য আমদানি করেছে। সংস্থাটির সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে, এ সময়ে বৈশ্বিক আমদানি থেকে সামগ্রিক শুল্ক আদায় হয়েছে ৬৪ হাজার ৪৩৯ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের চিত্রও প্রায় একই ছিল। তখন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি পণ্যের ওপর শুল্ক আদায় হয়েছিল ১ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকা। এটি আমদানি শুল্ক থেকে বাংলাদেশের মোট আয়ের প্রায় দেড় শতাংশ।