২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী গণ অভ্যুত্থানকে সংবিধানে স্বীকৃতি দেওয়ার অঙ্গীকার থাকছে জুলাই জাতীয় সনদে। একই সঙ্গে দেশের সংবিধান সংশোধন, পরিমার্জন ও পুনর্লিখনের প্রতিশ্রুতি; সংবিধান, বিচারব্যবস্থা, নির্বাচন, জনপ্রশাসন, পুলিশ ও দুর্নীতি দমনসংক্রান্ত সংস্কারের লক্ষ্যে নতুন আইন ও বিধি প্রণয়ন; প্রয়োজনে পুরোনো আইনে সংশোধন এবং সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো যে সুপারিশগুলোর বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করবে, সেই সুপারিশ বাস্তবায়নে সাত দফা অঙ্গীকারনামা অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫-এ।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সূত্রগুলো বলছে, এরই মধ্যে জুলাই জাতীয় সনদের একটি খসড়া রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবিত খসড়ায় সাত দফা অঙ্গীকার উল্লেখ করা হয়েছে। এসব অঙ্গীকার সংবলিত জুলাই সনদ বাস্তবায়নে আইনি ও সাংবিধানিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। শুধু তাই নয়, এই সনদ ঘোষণার পর জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে যে সরকার গঠিত হবে, সেই সরকারকে দুই বছরের মধ্যে সুপারিশকৃত সংস্কার সম্পন্ন করতে হবে। চলতি মাসেই জুলাই সনদে স্বাক্ষর করা সম্ভব হবে বলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আশা করছে। দ্বিতীয় দফা সংলাপের পরও যেসব বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়নি, সেসব বিষয়ে কমিশন সিদ্ধান্ত জানাবেন। ওই সব বিষয়ে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ (আপত্তি) দিয়ে সনদে স্বাক্ষর করতে পারবে রাজনৈতিক দলগুলো। মৌলিক সংস্কারের ২০টি বিষয়ের মধ্যে ইতোমধ্যে ১২টিতে একমত হয়েছে দলগুলো। আগামী দু-তিন দিনের মধ্যে এ নিয়ে একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হবে। এ সনদ আমাদের আগামী পথরেখা তৈরি করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ। সনদের প্রথম দফায় অঙ্গীকারনামা ছাড়াও দ্বিতীয় দফায় সংস্কার কমিশন গঠন, তৃতীয় দফা জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন ও চতুর্থ দফায় ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রম তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, পুলিশ সংস্কার কমিশন ব্যতীত অপর পাঁচটি কমিশনের প্রতিবেদনের গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬টি সুপারিশ স্প্রেডশিট আকারে দল ও জোটের কাছে মতামতের জন্য পাঠানো হয়। এ বিষয়ে ৩৫টি দল ও জোট তাদের মতামত কমিশনের কাছে পাঠায়। কমিশন অগ্রাধিকার ও গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় মোট ২০টি বিষয় নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফা আলোচনায় মিলিত হয়। এ প্রক্রিয়ার ফলে নিম্নলিখিত ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ রচিত হয়। সনদের পঞ্চম দফায় ঐকমত্যে উপনীত হওয়ার বিষয়গুলো উল্লেখ করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আলোচনা চলমান থাকায় এখনো খসড়ায় তা উল্লেখ করা হয়নি। তবে এ পর্যন্ত ১২টি বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে বলে কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে- তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকাল সর্বোচ্চ ১০ বছর, নির্বাচন কমিশন গঠনে বাছাই কমিটি গঠন, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন, স্বাধীন পুলিশ সংস্কার কমিশন গঠন, জরুরি অবস্থা ঘোষণাসংক্রান্ত সংবিধানের বিদ্যমান অনুচ্ছেদ পরিবর্তন, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির নির্বাচন পদ্ধতি সংস্কার, প্রধান বিচারপতির নিয়োগ প্রক্রিয়া নির্ধারণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদানের জন্য আইন প্রণয়ন, নির্বাচনি এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণে কমিটি গঠন, বিভাগীয় পর্যায়ে হাই কোর্ট বেঞ্চ স্থাপন এবং উপজেলা পর্যায়ে অধস্তন আদালত গঠন। সনদের পটভূমিতে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের উল্লেখ করে বলা হয়েছে, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের নীতিকে ধারণ করে সংগঠিত মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামো গঠনের আকাঙ্ক্ষা বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে তৈরি হয়েছিল দীর্ঘ ৫৩ বছরেও তা অর্জন করা যায়নি। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনতন্ত্রকে ‘স্বৈরাচারী’ উল্লেখ করে সনদের খসড়ায় বলা হয়, ২০০৯ সালে একটি দলীয় সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে ক্রমান্বয়ে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে জলাঞ্জলি দিয়ে অগণতান্ত্রিক চরিত্র ধারণ করতে থাকে।