রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আজ ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে যোগ দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, নতুন বাংলাদেশ গড়তে, নিজেদের সব চাওয়া-পাওয়া পূরণ করতে যে সুযোগ এসেছে, তা আর আসবে না। এই সুযোগ হারাতে চাই না। ছোট-খাটো বিষয়ে আটকে গিয়ে আমরা যেন বড় জিনিস হারিয়ে না ফেলি। আমরা এমনভাবে এই জাতিকে দাঁড় করিয়ে দিতে চাই যে, এটা শুধু উপরের দিকে উঠবে; ডানে-বায়ে তাকানোর দরকার হবে না। আমরা হাইওয়ে বানিয়ে ফেলেছি। এই পথেই যাব। আমাদের যাত্রাপথ পরিস্কার। আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই নির্বাচন হবে। জুলাই সনদে একমত হয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে আমরা নির্বাচনে যেতে চাই। ভেতরে কোনো দুঃশ্চিন্তা রেখে যেন আমাদের নির্বাচনে যেতে না হয়।
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এ বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এটা শুধু নির্বাচন না, এটা নবজাগরণ। এই যে এতো ত্যাগ, আত্মাহুতি- এগুলো সার্থক হবে যদি আমরা ওই নবজন্মটা লাভ করতে পারি। মাঝখানে মনে পড়ছিল আলাদীনের প্রদীপের কথা। প্রদীপে ঘষা দিলে একটা দৈত্য বেরিয়ে আসে। দৈত্য এসে জিজ্ঞাসা করে- কী করতে হবে? এই যে প্রশ্নটা করে, এর উত্তর নানাভাবে দেওয়া যায়। তার কাছে চা চাইলে চা নিয়ে আসতো, সারা দুনিয়া নিয়ে আসতে বললে দুনিয়া নিয়ে আসতো। এখন ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সেই দৈত্য সৃষ্টি করে দিয়েছে আমাদের জন্য। আমরা কি তার কাছে চা চাইব? নাকি আমরা দুনিয়া পাল্টে ফেলতে চাইব? কোনো বিষয় ছোট আকারে দেখা ঠিক না। সুযোগ কাজে লাগিয়ে আমরা এই জাতিকে সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে তৈরি করে দিয়ে যাব। ছোট-খাটো বিষয়ে আটকে গিয়ে আমরা যেন বড় জিনিস হারিয়ে না ফেলি। আমরা এমনভাবে এই জাতিকে দাঁড় করিয়ে দিতে চাই যে এটা শুধু উপরের দিকে উঠবে; ডানে-বায়ে তাকানোর দরকার নেই।
তিনি বলেন, আমাদের এতো সংস্কার কেন দরকার হচ্ছে? কারণ স্বৈরাচার যাতে আর কোনোভাবে ঢুকতে না পারে এজন্য সব পথঘাট বন্ধ করতে হবে। আমাদের সবার একমত হয়ে এই কাজটা করতে হবে। সবার কাছে আবেদন থাকবে যখনই জুলাই সনদ করবেন, কোলাকুলি করে করবেন, যে আমরা একমত হয়ে গেছি। তাহলে সবকিছু সার্থক হবে। যেহেতু আলাদীনের দৈত্য আমাদের সামনে আছে, আমাদের শুধু চাইতে হবে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, যখন ঐকমত্য কমিশন গঠন করলাম, তখন সদস্যরা কেউ জানতো না এটা কি জিনিস। না জেনেও এটাকে আপনারা গ্রহণ করেছেন। এ আলোচনা চলতে থাকবে। এই দৈত্যকে আমরা আর পাব না। একবারই পেয়েছি। তার কাছে আমাদের মনের সব আশা পূরণের দায়িত্ব দিয়ে দেব।
আজ এই পর্বে সমাপ্তি হলো। এই আনন্দঘন পরিবেশ বজায় রেখেই আমরা নির্বাচন পর্যন্ত যেতে চাই। ভেতরে কোনো দুঃশ্চিন্তা রেখে যেন আমাদের নির্বাচনে যেতে না হয়। উৎসব এখান থেকে সৃষ্টি হবে। সেই উৎসব নিয়েই নির্বাচন হবে। এবং ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই হবে। এটাই পথ। আমরা হাইওয়ে বানিয়ে ফেলেছি। এই পথেই যাব। আমাদের যাত্রাপথ পরিস্কার।
তিনি আরও বলেন, যে সব জিনিস হয়ে গেছে তা থেকে পুরো দেশের মানুষ মুক্ত হতে চায়। সমস্ত পথ-ঘাট বন্ধ করতে চায়। এখন থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই কাজটা যদি আমরা করে ফেলতে পারি, তাহলে আমাদের দেশ যেমন নিশ্চিন্ত হবে, তেমনি সারা পৃথিবী আমাদেরকে অনুসরণ করবে। এখনো আমরা সবাই বুঝছি না যে, ঐকমত্য কমিশন আমাদের কী দিয়েছে। এক বছর পর যখন এদিকে ফিরে দেখবেন তখন বুঝতে পারবেন কী মহাকাণ্ড আপনারা করেছেন। দুই বছর, দশ বছর পর যখন অন্যরা দেখবে, তারা অবাক দৃষ্টিতে তাকাবে। সেই কাজটা যেন নিখুঁত হয়। এমনভাবে করব যে এটা থেকে একটা নতুন জাতি জন্মগ্রহণ করবে। সেই আবেদন আপনাদের কাছে। এটা ব্যর্থ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটাই একমাত্র সুযোগ, এবং এটাকে আমাদের গ্রহণ করতেই হবে। সমঝোতা বলেন, ঐক্য বলেন, যখন নির্বাচনে যাব, একমত হয়েই যাব। নির্বাচন শেষ করে আমরা উৎসব করব। যে সব ভয়ঙ্কর কথাবার্তা আমরা শুনি, সেগুলো যেন বাস্তবে দেখতে না হয়।
আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ। ঐকমত্য কমিশনের যারা দিনরাত পরিশ্রম করে এই কাজটা করেছেন, তাদেরকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন