বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ডলারের বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা হবে। আমাদের মনে হচ্ছে ডলারের বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করে দেওয়ার সময় হয়েছে। বাজারভিত্তিক করা হলেও বর্তমানে ডলারের যা দর রয়েছে, তার থেকে খুব বেশি তারতম্য ঘটবে না। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। গভর্নর বলেন, আইএমএফের সঙ্গে আমাদের সময় নিয়ে একরকম মতপার্থক্য ছিল। আমরা চাচ্ছিলাম সময় যখন উপোযোগী হবে, তখন ডলারের বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা হবে। তবে আইএমএফ এপ্রিলের শেষ সভায় জানিয়েছিল যে, জুনে তাদের বোর্ড মিটিংয়ের আগেই বাজারভিত্তিক করতে। এখন আমরা মনে করছি অর্থনীতির অবস্থা স্থিতিশীল হয়েছে। তাই আমরা প্রস্তুত ডলার দরকে বাজারভিত্তিক করতে। সে কারণে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করি আমাদের সিদ্ধান্ত সঠিক। তিনি বলেন, ডলার দরে কোনোরকম অস্থিতিশীলতা হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক হস্তক্ষেপ করবে। তবে আশা করছি, বাংলাদেশ ব্যাংকের তা করতে হবে না। এলসি নিষ্পত্তি করতে কোনো ব্যাংকের যদি কোনো রকমের চাপ তৈরি হয়, তাহলে অন্য ব্যাংক থেকে ডলার নিয়ে তা পূরণ করার পরামর্শ দেন গভর্নর। তিনি বলেন, আগের চেয়ে আমদানির এলসি খোলা অনেক বেড়েছে। তবে বাজারে ডলারের কোনোরকম সংকট তৈরি হয়নি। বিদেশে অর্থ পরিশোধেও কোনোরকম বিধিনিষেধ দেয়নি বাংলাদেশ ব্যাংক। ‘রিজার্ভ আমরা বাড়িয়েছি, সামনে আরও বাড়ানো হবে। তবে রিজার্ভ এখন যা রয়েছে তা পর্যাপ্ত। দেশের অর্থনীতি একটি ভালো অবস্থানে রয়েছে। মূল্যস্ফীতি কমে এসেছে। সামনের মাসে আরও কমবে বলে আশা করছি। আগস্টের পর থেকে রিজার্ভ থেকে কোনো ডলার বিক্রি করেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
জুনের মধ্যে ৩৫০ কোটি ডলার পাবে বাংলাদেশ : গভর্নর : বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কিস্তিসহ উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে প্রায় ৩৫০ কোটি ডলার জুনের মধ্যে হাতে পেতে পারে বাংলাদেশ। এর মধ্যে আইএমএফ দেবে ১৩০ কোটি ডলার। বাকি ২২০ কোটি ডলার আসবে বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকা, এআইআইবি ও ওপেক থেকে। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের সভাকক্ষে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, আইএমএফ চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ ছাড় করলে জুনের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার পেতে পারে। তাতে বাংলাদেশের রিজার্ভ শক্তিশালী হওয়ার পাশাপাশি মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় আশা করছে।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ অবশ্য সপ্তাহ দুয়েক আগে ওয়াশিংটন থেকে ফিরে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি যেভাবে ‘ঘুরে দাঁড়িয়েছে’, তাতে আইএমএফের ঋণের বাকি কিস্তিগুলোর ‘খুব একটা প্রয়োজন নেই’। ঋণের শর্ত হিসাবে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি বাংলাদেশকে যেসব পরামর্শ দিচ্ছে, তার অন্যতম ছিল এনবিআরের সংস্কার। সে অনুযায়ী এনবিআরকে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে দুই ভাগে আলাদা করা হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সার্বিক বিষয়টি তুলে ধরে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষার স্বার্থে সব বিষয় সতর্কতার সঙ্গে পর্যালোচনা করে উভয় পক্ষ রাজস্ব ব্যবস্থাপনা, মুদ্রা বিনিময় হারসহ অন্যান্য সংস্কার কাঠামো বিষয়ে সম্মত হয়েছে।’ ‘চতুর্থ রিভিউর স্টাফ লেভেল অ্যাগ্রিমেন্ট সম্পন্ন হওয়ায় আশা করা হচ্ছে আইএমএফ চলতি বছরের জুনের মধ্যে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির জন্য নির্ধারিত ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার একত্রে ছাড় করবে। আইএমএফের ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়াও বিশ্বব্যাংক, এডিবি, এআইআইবি, জাপান এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীর কাছ থেকে আরও প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা জুন মাসের মধ্যে বাংলাদেশ প্রত্যাশা করছে।’ এসব ঋণের ক্ষেত্রে সংস্থাগুলো বিভিন্ন শর্ত দিলেও বাংলাদেশ তার নিজস্ব বাস্তবতা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়। মন্ত্রণালয় বলছে, ‘উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে এ অর্থ প্রাপ্তির ফলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও শক্তিশালী হবে যা মুদ্রার বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক হবে। বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীর কাছ থেকে বাজেট সহায়তা গ্রহণের ক্ষেত্রে যেসব সংস্কার কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে, তা সম্পূর্ণরূপে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব বিবেচনায় পরিকল্পিত এবং জাতীয় স্বার্থে নেওয়া হচ্ছে। এসব সংস্কার কর্মসূচির ক্ষেত্রে উন্নয়ন সহযোগীদের কার্যক্রম শুধু কারিগরি সহায়তা প্রদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ।’ আর্থিক সংকট সামাল দিতে ২০২৩ সালে আইএমএফের সঙ্গে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তি করে বাংলাদেশ।