চলমান তাপপ্রবাহ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। কয়েকদিন ধরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রায় পুড়ছে চুয়াডাঙ্গা। তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে রাজধানীতেও। অতি তীব্র তাপপ্রবাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে উঠেছে। ঘরে বাইরে কোথাও স্বস্তি নেই। একদিকে দাবদাহে দুর্বিষহ জীবন, অন্যদিকে ঘটছে বজ্রপাতে প্রাণহানি। গতকাল একদিনেই চার জেলায় বাজ পড়ে ১১ জন নিহত হয়েছেন। এ দিন চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয় চুয়াডাঙ্গায়। ঢাকায় রেকর্ড করা হয় ৪০.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা বছরের সর্বোচ্চ। গতকালও চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তবে তা শনিবারের তুলনায় কিছুটা কম। ঢাকায়ও গতকাল তাপমাত্রা কিছুটা কমেছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। এদিকে ঢাকা ও চুয়াডাঙ্গা ছাড়াও দেশের কিছু জেলার তাপমাত্রা গতকাল ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল। এর মধ্যে যশোরে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ২, যা শনিবারও একই ছিল। রাজশাহীতে ৪০ দশমিক ৮, যা শনিবার ছিল ৪০ দশমিক ৭, ঈশ্বরদীতে ৪০, যা শনিবার ছিল ৩৯ দশমিক ৯, বাঘাবাড়ীতে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা শরিবারও একই ছিল। গতকাল সন্ধ্যায় আবহাওয়াবিদ শাহীনুল ইসলাম জানান, রবিবার ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৯.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গায় রেকর্ড হয়েছে ৪১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ থেকে তাপমাত্রা কমতে শুরু করবে। কিছু কিছু এলাকায় অল্প অল্প বৃষ্টিও হতে পারে। ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো, বৃষ্টি, বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
অন্যদিকে চলমান তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে ঢাকার রাস্তার পাশের ঠান্ডা শরবতের দোকানগুলোয় ভিড় বেড়েছে। বিশেষ করে বেল, লেবু ও তোকমা দিয়ে তৈরি শরবতের বিক্রি কয়েক গুণ বেড়েছে। মিরপুরের শরবত বিক্রেতা আল আমিন বলেন, এই গরমে মানুষ ঠান্ডা কিছু খুঁজছে।
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি জানান, টানা চার দিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়। এর মধ্যে তিন দিন ছিল তীব্র ও অতিতীব্র তাপপ্রবাহ। সে ধারাবাহিকতায় রবিবার বেলা ৩টায় জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ তাপমাত্রা সারা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ২৬ শতাংশ।
চার জেলায় বজ্রপাতে ১১ জনের মৃত্যু : বজ্রপাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও নওগাঁয় বজ্রপাতে ১১ জন নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন আরও ছয়জন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি জানান, গতকাল বিকালে নাসিরনগর ও আখাউড়ায় পৃথক বজ্রপাতে কৃষকসহ পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন পাঁচজন। নিহতরা হলেন, সরাইল উপজেলার জোয়াদ আলীর ছেলে আবদুর রাজ্জাক, গোকর্ণ গ্রামের আবদুল সালামের ছেলে শামসুল হুদা, চাতলপাড় ইউনিয়নের কচুয়া গ্রামের শেখ মুহাম্মদ আলমগীর আনছারীর মেয়ে জাকিয়া বেগম, আখাউড়া উপজেলার বনগজ গ্রামের মদন খানের ছেলে জমির খাঁ এবং রুটি গ্রামের সেলিম শেখমিয়া। কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, কিশোরগঞ্জে বজ্রপাতে চারজন কৃষক নিহত ও আহত হয়েছেন একজন। গতকাল বিকাল ৩টার দিকে ভৈরব, কুলিয়ারচর, করিমগঞ্জ ও হোসেনপুর উপজেলায় এসব বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা জানান, বিকাল ৩টার দিকে বজ্রসহ বৃষ্টি শুরু হয়। আগে থেকেই জমিতে কাজ করছিলেন ওই তিন কৃষক। বজ্রপাতে আক্রান্ত হয়ে তারা গুরুতর আহত হন। স্থানীয় লোকজন তাদেরকে উদ্ধার করে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। নিহতরা হলেন ভৈরব উপজেলার শ্রীনগর গ্রামের ইউনুস মিয়ার ছেলে ফয়সাল মিয়া (২৮) ও রসুলপুর গ্রামের আফছর উদ্দিন মিয়ার ছেলে ফারুক মিয়া (৬৫), করিমগঞ্জ উপজেলার সাগুলি গ্রামের মাজু মিয়ার ছেলে হাদিস মিয়া (৩২) এবং কুলিয়ারচর উপজেলার হাজারিনগর গ্রামের সফিকুল ইসলাম সফু মিয়ার ছেলে কবির মিয়া (২৫)।
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, গতকাল বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে আজমিরীগঞ্জ উপজেলার কাকাইলছেও ইউনিয়নের বেনিকান্দি গ্রামে বজ্রপাতে রাজু মিয়া (২০) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি তমুজ আলীর ছেলে।
নওগাঁ প্রতিনিধি জানান, মান্দা উপজেলায় গতকাল বিকালে বজ্রপাতে জিল্লুর রহমান (৪০) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিকালে আকাশে মেঘ দেখে কৃষক জিল্লুর শ্রমিক নিয়ে মাঠে শুকানো ধান ঢেকে রাখার জন্য যান। এ সময় হঠাৎ বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। তিনি উপজেলার কুসুম্বা ইউনিয়নের কুসুম্বা দিয়াড়াপাড়া গ্রামের মৃত আয়েশ উদ্দিনের ছেলে।
ময়মনসিংহে ঝড়ে নিহত দুজন : ময়মনসিংহে কালবৈশাখি ঝড়ে গাছচাপায় ও ডাল ভেঙে পড়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বিকাল ৪টার দিকে ঘাগড়া ইউনিয়নের বাড়েরা ও মরাকুড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন বাড়েরা এলাকায় মজিদের ছেলে সজিব মিয়া (২০) ও মরাকুড়ি এলাকার মৃত আফসার আলীর ছেলে অপরজন সুরুজ মিয়া (৬০)। নিহত সজীবের প্রতিবেশী মো. আজাদ জানান, ঘটনার সময় নিহত সজীব গরুর খাবারের জন্য ফসলি মাঠে ঘাস কাটতে গিয়েছিলেন। এ সময় হঠাৎ ঝড় শুরু হলে তিনি একটি কড়ই গাছের নিচে আশ্রয় নেন। কিন্তু ঝড়ে গাছটি উপড়ে গেলে সজীব গাছের নিচে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান।