গত ৬ মে দৈনিক প্রথম আলোর পক্ষ থেকে পত্রিকাটির আইন কর্মকর্তা (প্রশাসন) অ্যাডভোকেট মো. তারেক মাহমুদ দুর্জয় বাংলাদেশ প্রতিদিনের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক বরাবর একটি প্রতিবাদপত্র পাঠিয়েছেন। প্রতিবাদপত্রে বলা হয়েছে, ৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ থেকে প্রায় নিয়মিতভাবে প্রথম আলো এবং এর সম্পাদককে জড়িয়ে সরাসরি আক্রমণাত্মক ও বিদ্বেষপ্রসূত এবং সাংবাদিকতার নীতিনৈতিকতাবিরোধী অসামঞ্জস্যপূর্ণ সংবাদ ও মন্তব্য প্রকাশ ও প্রচার করে আসছে। ‘২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা : খালেদা ও তারেককে ফাঁসিয়েছে প্রথম আলো’, ‘বেগম জিয়াকে রাজনীতি থেকে মাইনাসের মাস্টারমাইন্ড প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার’, ‘খালেদা, তারেক টার্গেট দিস টাইম’, ‘প্রথম আলো গোষ্ঠীর ইসলামবিরোধী তৎপরতা’ ইত্যাদিসহ বিবিধ শিরোনামে ৮৩টির বেশি সংবাদ ও মন্তব্য প্রকাশিত হয়।
প্রতিবাদলিপিতে আরও বলা হয়, প্রকাশিত ও প্রচারিত এসব সংবাদ ও মন্তব্যের বর্ণনা ও দাবি সম্পূর্ণরূপে বানোয়াট, ভিত্তিহীন, সৃজিত, মানহানিকর ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
প্রতিবাদপত্রের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ প্রতিদিনের বক্তব্য হলো : এক. একই খবর বা মন্তব্য একাধিক পত্রিকায় প্রকাশের রীতি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। ‘সিন্ডিকেট রিপোর্টিং’ এখন বিশ্বের সাংবাদিকতায় বহুলপ্রচলিত ও জনপ্রিয় পদ্ধতি। পৃথিবীতে এ রকম বহু প্রবন্ধ, নিবন্ধ, অনুসন্ধানী প্রতিবেদন একযোগে একাধিক সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়। সাংবাদিকতায়ও এটা নতুন বিষয় নয় এবং সাংবাদিকতার রীতিবিরুদ্ধও নয়।
দুই. মিডিয়া স্টার লিমিটেডের পত্রিকা প্রথম আলো তাদের প্রতিবাদপত্রে যে রিপোর্টগুলোর কথা উল্লেখ করেছে তার কোনোটাই বাংলাদেশ প্রতিদিনের নিজস্ব অনুসন্ধান নয়, বরং প্রথম আলোয় বিভিন্ন সময় (২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত) প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো তুলে ধরা হয়েছে মাত্র। এ প্রতিবেদনগুলোয় কোনোটিতেই বাংলাদেশ প্রতিদিন নতুন কোনো তথ্য সংযোজন করেনি। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ প্রতিদিন প্রতিটি প্রতিবেদনের সঙ্গে সেই সময়কার প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদনের সংবাদপত্রের পেপার ক্লিপিং যুক্ত করেছে এবং প্রথম আলোকে উদ্ধৃত করেই ওই প্রতিবেদনগুলো প্রকাশ করা হয়েছে। সাংবাদিকতার নামে প্রথম আলো যে অপসাংবাদিকতা করে তার প্রামাণ্য দলিল ওই সব প্রতিবেদন।
এ ছাড়া ‘তারেকের দুর্নীতির বিচার হতে হবে’ শিরোনামে সম্পাদক মতিউর রহমানের মন্তব্য প্রতিবেদন বা ‘জঙ্গিদের মদদদাতা বিএনপির ৮ মন্ত্রী সাংসদ’, ‘দ্বিতীয় মেয়াদে খালেদা জিয়া বেপরোয়া হয়ে পড়েন’, ‘মার্শাল ডিস্টিলারিজ কব্জায় নিয়ে তারেক-মামুনের চাঁদাবাজি’ শীর্ষক অসংখ্য প্রতিবেদন প্রথম আলো বিএনপির বিরুদ্ধে প্রকাশ করেছে।
প্রসঙ্গত, ‘২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা : খালেদা ও তারেককে ফাঁসিয়েছে প্রথম আলো’ শীর্ষক বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রকাশিত এ প্রতিবেদনে প্রথম আলো কর্তৃক জজ মিয়া সাজানো নাটক এবং ২১ আগস্টকে অন্য খাতে প্রবাহিত করার প্রয়াসকেই তুলে ধরা হয়েছে। জঙ্গি আবিষ্কার-এ সবই প্রথম আলোর প্রতিবেদন। এখানে বাংলাদেশ প্রতিদিন কোনো নতুন তথ্য বা উপাত্ত যোগ করেনি। প্রথম আলোই সে সময় এ প্রতিবেদনগুলো প্রকাশ করেছে। প্রথম আলোর এ প্রতিবেদনগুলোর কথা বাংলাদেশ প্রতিদিন এখন স্মরণ করিয়ে দিয়েছে মাত্র। প্রথম আলো কী মাত্রায় ‘অপসাংবাদিকতা’ করেছে তা উপস্থাপন করেছে মাত্র। অন্যান্য প্রতিবেদনের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। প্রতিটি প্রতিবেদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সময়ের প্রথম আলোর প্রতিবেদনগুলো উদ্ধৃত করা হয়েছে। এখানে বাংলাদেশ প্রতিদিন নতুনভাবে কোনো কিছু তৈরি বা নতুন তথ্য-উপাত্ত সংযুক্ত করেনি। কাজেই এখানে মানহানিকরের মতো কিছু করা হয়নি। কারণ প্রতিবেদনগুলো বাংলাদেশ প্রতিদিনের বানোয়াট বা সৃজিত নয়। আশা করি বিষয়টি আপনারা অনুধাবন করবেন।
তিন. বাংলাদেশ প্রতিদিন সব সময় সাংবাদিকতার মান বজায় রেখে চলেছে। এ পত্রিকা সৎ সাংবাদিকতায় দায়িত্বশীল। নিরপেক্ষ সেজে যখন যে সরকার আসে সে সরকারকে তুষ্ট করার জন্য অপসাংবাদিকতাকে বাংলাদেশ প্রতিদিন কখনোই অবলম্বন করেনি, করবেও না।
চার : প্রথম আলোর ইসলামবিরোধী তৎপরতা দেশবাসী অবগত রয়েছেন। ২০০৭ সালে মহানবী (সা.)-কে অবমাননা করে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিবের হাত ধরে তওবা করেছিলেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান। চলতি বছর ৩০ মার্চ ঈদ শুভেচ্ছা কার্টুনে কুকুরে ছবি ছাপে তারা। ২০১২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে সম্পাদকীয় প্রকাশ করে। এসব ঘটনায় ক্ষুব্ধ দেশের আলেম সমাজ তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছিল। শুধু নিন্দা-প্রতিবাদই জানায়নি, তারা পত্রিকাটির ডিক্লারেশন বাতিল ও সম্পাদকের বিচারও দাবি করেছিল। কুকুর কার্টুনের প্রতিবাদ জানিয়ে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বিবৃতিতে বলেছেন, প্রথম আলো পত্রিকাকে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। এসব ঘটনার খবর বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। সুতরাং প্রথম আলো এ যাবৎ ইসলামবিরোধী যা যা করেছে বাংলাদেশ প্রতিদিন শুধু সেসব কর্মকাণ্ড পাঠকের সামনে উপস্থাপন করেছে।
পাঁচ : প্রতিবাদপত্রে জানানো হয়েছে যে বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রকাশিত প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের অধিকার প্রথম আলো সংরক্ষণ করে। এ পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের বক্তব্য হলো, প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোর সপক্ষে প্রথম আলোয় প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদনই সাক্ষ্য দেবে। প্রথম আলোর ওইসব রিপোর্টের কাটিং আমাদের কাছে সংরক্ষিত আছে। প্রয়োজনে যথাযথ আইনি ব্যবস্থায় প্রমাণস্বরূপ উপস্থাপন করা হবে।