আলোচিত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তাঁর ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ সব আসামি বেকসুর খালাস পেয়েছেন আপিল বিভাগের রায়ে। বিচারিক আদালত ও হাই কোর্টের দেওয়া সাজার রায় বাতিল করে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ গতকাল সর্বসম্মত এ রায় দেন। রায়ে আপিল বিভাগ বলেছেন, এই মামলা পরিচালনায় ইচ্ছাকৃতভাবে আইন অপব্যবহারের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে, যা ‘বিদ্বেষমূলক বিচারপ্রক্রিয়া’ হিসেবে গণ্য। যারা আপিল করেননি, রায়টি তাদের জন্যও প্রযোজ্য হবে। এতে তাদের সম্মান পুনরুদ্ধার এবং নির্দোষতা নিশ্চিত করা হয়েছে। রায়ে আরও বলা হয়েছে, জামিনে থাকা সব আসামি তাদের জামিনের শর্ত থেকে অব্যাহতি পাবেন। কর্তৃপক্ষকে দ্রুত এই আদেশ কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রায়ের পর বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা তাদের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এই রায় প্রমাণ করে সব অভিযোগ ভিত্তিহীন ও বেআইনি। দেশে বিচারব্যবস্থা বলতে কিছুই ছিল না। ফ্যাসিস্ট সরকার যেভাবে বলত, সেভাবেই রায় হতো। রায়ের সময় বেগম জিয়ার পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও এম বদরুদ্দোজা ছাড়াও আইনজীবী কায়সার কামাল, মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল, এস এম শাহজাহান, রাগীব রউফ চৌধুরী, জাকির হোসেন ভূইয়া, মাকসুদ উল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ ও অনীক আর হক উপস্থিত ছিলেন। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার বাদী দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আসিফ হাসান। অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান রায়ের সময় আপিল বিভাগে উপস্থিত থাকলেও এ মামলায় বিচারিক আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে আইনজীবী থাকায় আপিল শুনানিতে অংশ নেননি বলে তিনি জানিয়েছেন। এ মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার আপিল খারিজ করে সাজা ১০ বছর বাড়িয়ে হাই কোর্ট রায় দিয়েছিলেন ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর। এ রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ১৪ মার্চ বেগম জিয়া পৃথক দুটি লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন। গত বছরের ১১ নভেম্বর আপিল বিভাগ খালেদা জিয়ার লিভ টু আপিল মঞ্জুর ও সাজার রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করে আদেশ দেন। এর ধারাবাহিকতায় সাজার রায়ের বিরুদ্ধে পৃথক আপিল করেন খালেদা জিয়া। এ ছাড়া ১০ বছর কারাদন্ড বহাল রেখে হাই কোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ গত বছর পৃথক আপিল করেন। খালেদা জিয়ার আপিলের ওপর ৭ জানুয়ারি শুনানি শুরু হয়। চতুর্থ দিনে গত মঙ্গলবার শুনানি শেষ হয়। আদালত গতকাল রায়ের জন্য দিন রাখেন। গতকাল সকাল পৌনে ১০টার দিকে রায়ের আদেশ-অংশ ঘোষণা করেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। রায়ের পর জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, যে মামলায় কিছুই ছিল না, সে মামলায় হাই কোর্ট বিভাগ সাজা পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করেন। এটি খুবই দুঃখজনক। সেই মামলার মধ্যে কোনো সারবত্তাই ছিল না। অর্থাৎ বিচারব্যবস্থা বলে কিছু ছিল না। ফ্যাসিস্ট সরকার যেভাবে বলত সেভাবে রায় হতো। আজকে মনে হয়েছে বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করেছে। তিনি বলেন, আজ (গতকাল) রায়ে আদালত বলেছেন, আপিল ইজ অ্যালাউড (আপিল মঞ্জুর)। আরও বলেছেন, বিচারিক আদালতে যে রায় দেওয়া হয়েছে, হাই কোর্ট বিভাগ যে রায় দিয়েছেন, সেগুলো বাতিল করে দেওয়া হলো। আদালত বলেছেন, যারা আপিল করতে পারেননি, তারেক রহমানসহ সবাইকে খালাস দেওয়া হয়েছে। এই প্রসিকিউশন ছিল বিদ্বেষমূলক ও প্রতিহিংসামূলক। কার বিরুদ্ধে প্রতিহিংসা? পুরো জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে। সারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসা। দুদকের আইনজীবী আসিফ হাসান জানান, মোট চারটি আপিল ছিল। চারটিই আদালত মঞ্জুর করেছেন। হাই কোর্ট ডিভিশন ও বিচারিক আদালতের রায় বাতিল করেছেন। যারা আপিল করতে পারেননি, তাদেরও (খালাস দিয়েছেন)। যেহেতু আদালত মামলাটিকে ম্যালিসাস প্রসিকিউশন (বিদ্বেষপূর্ণ কার্যধারা) বলেছেন, তাই তারাও এ সুবিধা পেয়ে খালাস পেলেন। বাকি দুজনের মধ্যে একজন তারেক রহমান। আরেকজন কামাল সিদ্দিকী। রায়টি দুদককে জানাব। তারপর দুদক সিদ্ধান্ত নেবে। এতিমদের সহায়তার উদ্দেশে বিদেশ থেকে পাঠানো ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করার অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই মামলাটি করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বিশেষ জজ আদালত-৫ রায় দেন। রায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদন্ড ও অর্থদন্ড দেওয়া হয়। খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ ও মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদন্ড ও অর্থদন্ড দেওয়া হয়। বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালে হাই কোর্টে আপিল করেন খালেদা জিয়া। কারাদন্ড ও অর্থদন্ডের রায়ের বিরুদ্ধে কাজী সালিমুল হক ও শরফুদ্দিন আহমেদ পৃথক আপিল করেন। অন্যদিকে খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধি চেয়ে দুদকের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাই কোর্ট রুল দেন। তিনটি আপিল ও রুলের ওপর শুনানি শেষে ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর হাই কোর্ট একসঙ্গে রায় দেন। রায়ে খালেদা জিয়ার আপিল খারিজ হয়। দুদকের রিভিশন আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দেওয়া রুল যথাযথ ঘোষণা করে খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছরের কারাদন্ড দেন হাই কোর্ট। ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ ও কাজী সালিমুল হকের আপিল খারিজ করে ১০ বছরের সাজা বহাল রাখেন আদালত। হাই কোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে গত বছর পৃথক আপিল করেন শরফুদ্দিন আহমেদ ও কাজী সালিমুল হক। খালেদা জিয়ার আপিলের সঙ্গে এই দুটি আপিল একসঙ্গে শুনানি হয়। গতকাল রায় দেন আপিল বিভাগ।
শিরোনাম
- ভারত থেকে ৩৬ হাজার টন চাল নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ
- পুতিনের সঙ্গে টানা ৪ ঘণ্টা বৈঠক করলেন ট্রাম্পের দূত
- এ সরকারের আমলেই বিচার বিভাগের সব সংস্কারের চেষ্টা করা হবে : আইন উপদেষ্টা
- ইউক্রেনকে ২১ বিলিয়ন ইউরো সহায়তার প্রতিশ্রুতি ইউরোপের
- ইসরায়েলের তেল আবিবে ড্রোন হামলার দাবি হুথিদের
- নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে চীনে তেল রপ্তানিতে ইরানের রেকর্ড
- পৃথক সচিবালয়ের জন্য অধ্যাদেশ তৈরির কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে : প্রধান বিচারপতি
- নিম্ন আদালত মনিটরিংয়ে হাইকোর্টের ১৩ বিচারপতি
- শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল পাপুয়া নিউ গিনি
- আর্জেন্টিনার জন্য ১২ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা প্যাকেজ বিশ্বব্যাংকের
- পরমাণু ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ‘বাস্তব ও ন্যায্য’ চুক্তি চায় ইরান
- জমি নিয়ে বিরোধে সংঘর্ষে আহত শতাধিক, ১৪৪ ধারা জারি
- শুল্কযুদ্ধে কে আগে পিছু হটবেন ট্রাম্প নাকি শি জিনপিং?
- হাসিনার দোসররা ফ্যাসিবাদের মুখাবয়ব পুড়িয়ে দিয়েছে: উপদেষ্টা ফারুকী
- ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি ঘিরে নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা
- ‘ফ্যাসিবাদের মোটিফ’ পুড়িয়ে ফেলার অভিযোগে থানায় জিডি
- ২০৩০ সালে বাণিজ্যিক ৬জি চালু করবে চীন
- গাজা যুদ্ধ বন্ধ চেয়ে চিঠি দেওয়া ১০০০ সেনাকে বরখাস্ত করল ইসরায়েল
- আগুনে পুড়ে গেল আনন্দ শোভাযাত্রার জন্য বানানো ফ্যাসিস্ট হাসিনার মোটিফ
- ইরানের সঙ্গে ব্যবসা, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কবলে দুবাইয়ের ভারতীয় ব্যবসায়ী
খালেদা-তারেক খালাস
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় বাতিল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট ভার্সন

টপিক
এই বিভাগের আরও খবর
সর্বশেষ খবর