অপরিকল্পিত নগরায়ণ, গাছ কমে যাওয়া, মাত্রাতিরিক্ত শিল্পায়নে বাতাসে বাড়ছে গ্রিনহাউস গ্যাস। এতে ক্রমেই উষ্ণ হয়ে উঠছে পৃথিবী। উধাও শীতকাল। গ্রীষ্মে তাপমাত্রা ছাড়াচ্ছে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পানির অভাবে মরুকরণ শুরু হয়েছে অনেক জেলায়। গরমে গলছে মেরু অঞ্চলের বরফ। এতে বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। নদনদী দিয়ে লবণাক্ততা ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশে। বাড়ছে ঘূর্ণিঝড়, বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ। জলবায়ু পরিবর্তনের এমন পরিস্থিতিতে চরম ঝুঁকিতে পড়েছে দেশের কৃষি।
এক সময় অগ্রহায়ণে শিশিরে ভিজত সবুজ ঘাস। পৌষ-মাঘে হাড় কাঁপাত শীত। ফাল্গুনের বাতাসে নতুন ফুলের গন্ধের সঙ্গে থাকত শীতল পরশ। শীতকালে দু-একবার বৃষ্টি ঝরিয়ে বাতাস ও গাছপালা পরিষ্কার করত প্রকৃতি নিজেই। বৃষ্টির পরই জেঁকে বসত শীত। এবার শীতে বৃষ্টির দেখা মেলেনি। মাঘের এক সপ্তাহ থাকতেই দেশের তাপমাত্রা ছাড়িয়েছে ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত বছর মার্চের শেষদিন থেকে টানা ৩৭ দিনের দীর্ঘতম তাপপ্রবাহের কবলে পড়ে দেশ। জুনে যখন বৃষ্টির দেখা মেলার কথা, তখনো এক ডজনের বেশি জেলার ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। তাপমাত্রার এই পরিবর্তনে বিরূপ প্রভাব পড়ছে কৃষিতে।
এবার শীত কমায় শীতকালীন নানা সবজির ফলনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। একইভাবে উচ্চ তাপমাত্রার কারণে গত মৌসুমে আম ও লিচুর ফলন কমে যায়। মুকুল আসেনি অনেক গাছে, ঝরে যায় আম ও লিচুর গুটি। গরমে মারা যায় খামারের মাছ ও মুরগি। গত এপ্রিল-মে মাসে ৬০-৬৫ হাজার প্রান্তিক খামারে হিটস্ট্রোকে দৈনিক গড়ে এক লাখ মুরগি মারা যায়। দৈনিক ডিমের উৎপাদন কমে যায় ৫০-৬০ লাখ পিস। পরিপক্ব হওয়ার আগেই পেকে যায় ধান। অনেক ধানে চিটা হয়। কৃষিবিদরা বলছেন, তাপমাত্রা এভাবে বাড়তে থাকলে বাংলাদেশে ফলন বিপর্যয় হতে পারে।