কাজী হায়াতের ‘ধর’ ছবির পাগলি এখনো আছে। প্রখ্যাত চলচ্চিত্রনির্মাতা কাজী হায়াৎ। নব্বই দশকের শেষ ভাগে তিনি দেখলেন মগবাজার এলাকায় এক পাগলি অসহায়ভাবে ঘুরে বেড়ায়। কিছুদিন পর লক্ষ্য করলেন সেই পাগলিটি অন্তঃসত্ত্বা। এক সময় তার কোলজুড়ে এলো সন্তান। কে এই সন্তানের বাবা, কেউ জানে না। জীবনধর্মী চলচ্চিত্রের কারিগর কাজী হায়াতের মনে বিষয়টি গভীরভাবে রেখাপাত করল। সিদ্ধান্ত নিলেন বিষয়টি নিয়ে একটি ছবি নির্মাণ করবেন। ১৯৯৯ সালে মুক্তি পেল সেই চলচ্চিত্র। শিরোনাম ‘ধর’। বিবেক নাড়া দেওয়া গল্প লিখলেন নির্মাতা নিজেই। ছবিটি দেখে দর্শকের চোখ অশ্রুসিক্ত হলো। সমাজের সর্বস্তরের মানুষের প্রশংসা কুড়াল। এখনো সেই পাগলিকে মগবাজার এলাকায় উদাসভাবে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। দিন কয়েক আগে মগবাজার এলাকায় গিয়েছিলাম একটি কাজে। হঠাৎ দেখি মগবাজার রেল ক্রসিংয়ের কাছে রোড ডিভাইডারের ওপর উশকোখুশকো অবস্থায় বসে কী যেন বিড়বিড় করে বলছে। তার কাছে গেলাম, তার নাম জানতে চাইলে নিশ্চুপ মুখে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকালো। অনেক কথার ভিড়ে জানতে চাইলাম তাকে নিয়ে একটি ছবি নির্মাণ হয়েছিল একসময়, বিষয়টি তার জানা আছে কিনা? আবারও উদাস চাহনি, সঙ্গে হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়ানো। গল্প যখন মোটামুটি জমে উঠেছে তখনই তার নজরে এলো কেউ একজন তার ছবি তুলছেন। মুহূর্তে হাসি মিলিয়ে তার চোখেমুখে ফুটে উঠল অজানা আতঙ্কের ছাপ। মুখ লুকানোর চেষ্টা তার। নানাভাবে প্রবোধ দেওয়ার চেষ্টা করেও কোনো লাভ হলো না। একসময় পাগলিটি রেললাইনে উঠে দৌড়ে মিলিয়ে গেল অজানায়। জানা গেল মগবাজারের একটি ঝুপড়ি ঘরে ছেলেকে নিয়ে সে থাকে। বেশির ভাগ সময় মগবাজার মোড় থেকে এফডিসির মোড় পর্যন্ত উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরেবেড়ায় এ পাগলি। কেউ টাকা- পয়সা বা খাবার দিলে নেয়। পাগল হলেও পিতৃ পরিচয়হীন সন্তানটিকে পরম মমতায় অনেক কষ্টে ভিক্ষার টাকায় বড় করে তুলেছে সে। ছেলেটি নাকি মাঝেমধ্যে গাড়ির ওয়ার্কশপে কাজ করে। অনেকে জানায়, কেউ তাকে কাজ দেয় না বলে অভাব ঘুচাতে মাঝেমধ্যে নানা অপরাধের সঙ্গে বাধ্য হয়ে জড়িয়ে যায়। স্থানীয়রা সেই পাগলি বা তার সন্তানের নামধাম সম্পর্কে কিছু বলতে পারে না। জানে না কীভাবে এ সন্তানের জন্ম হলো। খোদ নির্মাতা কাজী হায়াতের কাছেই এ সম্পর্কে জানতে চাইলে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে তিনি বলেন, সমাজে এমন প্রান্তিক শিকড়হীন মানুষের অভাব নেই। স্বাভাবিকভাবেই এদের প্রতি সমাজের দায়িত্ববোধ কম থাকে বলে সহজেই এরা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। তাদের কাছে একজন মন্ত্রী যা রিকশাওয়ালাও তা। অপরাধ জগতের অন্ধকারেই তাদের বসবাস। কাজী হায়াৎ আক্ষেপ করে বলেন, আমার আফসোস, এমন রুটলেসদের রাষ্ট্রীয় চার মৌলিক অধিকার অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা বাসস্থানের অধিকার থেকেও বঞ্চিত থাকতে হয় বলে তাদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা উত্তরোত্তর বেড়েই চলে। যা সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য ভয়ংকর যন্ত্রণা। আমি আমার অবজারভেশন ও দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে ‘ধর’ ছবিটি নির্মাণ করেছিলাম। ভেবেছিলাম ছবিটি দেখে সমাজের বিবেক জাগ্রত হবে। ছবিটি মুক্তির পর ব্যাপক সাড়া মিললেও দুঃখের বিষয় দীর্ঘ ২৬ বছর পরেও সেই পাগলি বা তার সন্তানের দায়িত্ব কেউ নেয়নি। তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি, জীবনমান এখনো বৃত্তবন্দি হয়ে আছে। শুধু এ দুজন মানুষ নয়, দেশে হাজারও এমন শিকড়হীন মানুষ রয়েছে যাদের প্রতি সমাজপতিদের নজর নেই বলে দেশে অবক্ষয় বেড়েই চলছে। ‘ধর’ ছবিটি শুরুতেই সেই পাগলি ও তার সন্তানের কিছু ফুটেজ তুলে ধরে ব্যাকগ্রাউন্ডে নির্মাতা কাজী হায়াতের দরাজ কণ্ঠে ভেসে ওঠে মর্মস্পর্শী সেই বর্ণনা- ‘এই হলো ঢাকা শহরের ব্যস্ততম মগবাজার চৌরাস্তা। আপনারা অনেকেই এই চৌরাস্তার আইল্যান্ডের পাশে মহিলাটিকে শিশু সন্তান কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছেন। রোদ-বৃষ্টির মধ্যেও মহিলার রুগ্ন হাত অনেক গাড়ির দরজার পাশে ভিক্ষা পাওয়ার আশায় পেতে দেয়। কেউ দেয় কেউ দেয় না। কোথায় তার সংসার, কোথায় রাত্রে থাকে আমরা তা কেউ জানি না। কে এই সন্তানের পিতা জানি না। পাগলিটির কোনো বিয়ে হয়েছিল কিনা জানি না। শিশুটির ভবিষ্যৎ কী হবে তা-ও আমরা জানি না।’ ছবিটিতে এ সন্তানের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন প্রয়াত নায়ক মান্না। পরিস্থিতির শিকারে যে হয়ে ওঠে একজন সন্ত্রাসী। রাষ্ট্র ও সমাজের মৌলিক অধিকারবঞ্চিত ‘অপূর্ব’ নামের ছেলেটির করুণ জীবন কাহিনি আজও সাধারণ দর্শককে কাঁদায়, কিন্তু বিবেক জাগ্রত হয় না সমাজপতিদের। আর তাই সমাজে আজ কিশোর গ্যাং নামের ভয়াবহ অপরাধীর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে চরম অবক্ষয়, এ থেকে সমাজ কখন মুক্তি পাবে? এমন প্রশ্ন ‘ধর’ ছবির দূরদর্শী নির্মাতা কাজী হায়াতের।
শিরোনাম
- বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে টেকনিশিয়ানের মৃত্যু
- আখাউড়ায় ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানে জরিমানা
- চরফ্যাশনে দুই ভাই হত্যা: তিন আসামির মৃত্যুদণ্ড
- কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে দুদকের অভিযান
- এসএসসির পুনঃনিরীক্ষণের ফল প্রকাশের তারিখ জানা গেল
- গণঅভ্যুত্থানে আহত ৩৪ জন এখনো থাইল্যান্ডে চিকিৎসাধীন : উপদেষ্টা
- রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্রসহ নারী আটক
- শেরপুরে দেড় কোটি টাকার চোরাই মালামাল জব্দ
- এই সফলতা ৩৬ দিনের নয়, ১৭ বছরের আন্দোলনের ফসল : মির্জা আব্বাস
- জুলাই আন্দোলনে নিখোঁজ মুন্নার পরিবারের পাশে বিএনপি
- সচিবালয় ও যমুনা এলাকায় সভা-সমাবেশ-গণজমায়েত নিষিদ্ধ
- জাতীয় স্বার্থে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকা প্রয়োজন : তারেক রহমান
- দেশ চালাবেন রাজনীতিবিদরা, অন্তর্বর্তী সরকার না : আলী রীয়াজ
- অন্তর্বর্তী সরকারকে তারেক রহমানের ধন্যবাদ
- ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠক শুক্রবার
- নির্বাচনের আগে লটারির মাধ্যমে এসপি-ওসিদের বদলি : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
- দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারে বাংলাদেশ-লাওস সমঝোতা স্মারক সই
- নির্বাচিত সরকার রাষ্ট্র সংস্কার করবে : সালাহউদ্দিন
- ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আরও ৩ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৪২৮
- নেত্রকোনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫শ চারা গাছ রোপণ
২৬ বছরেও পাগলি বা তার সন্তানের দায়িত্ব কেউ নেয়নি : কাজী হায়াৎ
‘ধর’ ছবির সেই পাগলি এখন
আলাউদ্দীন মাজিদ
প্রিন্ট ভার্সন

এই বিভাগের আরও খবর