যুক্তরাষ্ট্রের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চলতি বছরের অটাম সেশনে নতুন ভর্তি হওয়া আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৭ শতাংশ কমেছে। স্টুডেন্ট ভিসায় নতুন বিধিনিষেধ আর ট্রাম্প প্রশাসনের বিভিন্ন নীতিই এ পতনের প্রধান কারণ—সোমবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। খবর রয়টার্স এর।
যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভর্তির এই ধসের কথা জানিয়েছে, তাদের ৯৬ শতাংশ বলেছে—ভিসা আবেদনের ঝামেলা ছিল সবচেয়ে বড় বাধা। আর ৬৮ শতাংশ জানিয়েছে—ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার প্রভাব রয়েছে। আন্তর্জাতিক শিক্ষা বিষয়ক অলাভজনক সংস্থা ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন ৮২৫টি মার্কিন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তথ্য বিশ্লেষণ করে এই চিত্র দিয়েছে।
অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে ট্রাম্প প্রশাসন বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর কঠোর নজরদারি বাড়িয়েছে। নেওয়া হয়েছে একাধিক নীতি—যার মধ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা সীমিত করার উদ্যোগ। পাশাপাশি ভিসা আবেদনকারীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্ট দেখানোর নির্দেশও দেওয়া হয়েছে কনস্যুলার কর্মকর্তাদের। এসব অ্যাকাউন্টে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপ আছে কি না, তা যাচাইয়ের অংশ হিসেবে কিছু স্টুডেন্ট ভিসা বাতিলও করা হয়েছে। নতুন ভিসা নিতে গেলেও অনেক শিক্ষার্থী দেরির মুখে পড়েছেন।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র আনা কেলি, বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিতে ভিসা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে—দীর্ঘ সাক্ষাৎকারের তারিখ পাওয়া, বছরের শুরুতে ভিসা ইস্যু সাময়িক বন্ধ থাকা—এসবকিছু শিক্ষার্থীদের ভিসা পাওয়ার সক্ষমতায় সরাসরি প্রভাব ফেলেছে। ভিসা দেরি বা প্রত্যাখ্যান—এগুলো বহু বছর ধরেই আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তির পতনের কারণ হিসেবে চিহ্নিত।
২০২৪–২৫ শিক্ষাবর্ষে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১২ লাখ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী পড়াশোনা করেছে বলে অনুমান করছে অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল এডুকেটর্স। তাদের হিসাবে, ২০২৪ সাল পর্যন্ত এসব শিক্ষার্থীর অবদান দেশটির অর্থনীতিতে প্রায় ৫৫ বিলিয়ন ডলার।
অনেক আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী কোনো আর্থিক সহায়তা পান না, পুরো টিউশন নিজেরাই পরিশোধ করেন। স্থানীয় শিক্ষার্থী কমে যাওয়া, ব্যয় বৃদ্ধি আর সরকারি সহায়তা কমে যাওয়ার সময়ে বিদেশি শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রের বহু বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ আয়ের উৎস হয়ে উঠেছে।
সোমবারের প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়—২৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠান নতুন আন্তর্জাতিক ভর্তিতে বৃদ্ধি পেয়েছে, ১৪ শতাংশ স্থিতিশীল আছে, আর ৫৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠান পতনের কথা জানিয়েছে।
বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান বলেছে—এই সেশনে ভারতীয় শিক্ষার্থী সবচেয়ে কম ভর্তি হয়েছে, এবং তারাই জাতীয়ভাবে বড় পতনের প্রধান কারণ। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে ভারত এখন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ উৎস দেশ।
সূত্র: রয়টার্স
বিডি প্রতিদিন/আশিক