বাংলাদেশের মানুষ ঐতিহ্যগতভাবে নির্বাচনপ্রিয়। নির্বাচনের মাধ্যমে ভালো কিছু অর্জন আমাদের ইতিহাসের অংশ। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, বুড়িগঙ্গা ও তিতাস পারের এই দেশে একসময় কায়েম হয়েছিল মৎস্যন্যায়ের অপশাসন। জোর যার মুল্লুক তার এমন বীভৎস অবস্থা জারি ছিল শত বছর ধরে। সেই মহা দুর্দিনে এ দেশের মানুষ গোপাল পাল নামে এক সাহসী যুবককে তাদের রাজা নির্বাচিত করেছিল সবার মতামতের মাধ্যমে। রাজা গোপাল দেশে শান্তি এনেছিলেন। সমৃদ্ধি নিশ্চিত করেছিলেন। ১৯৪৭ সালে ভারত ভেঙে প্রতিষ্ঠিত হয় পাকিস্তান। স্বাধীনতার প্রাপ্য স্বাদ ভোগ করতে পারেনি এ দেশের মানুষ। বাঙালির অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। মায়ের বুলি বাংলা ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন দিতে হয় তরতাজা যুবকদের। তারপর আসে ১৯৫৪ সালের নির্বাচন। ৩০৯টি আসনের ৯টিতে জয়ী হয় ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ। বাদবাকি সব আসনে জয়ী হয় হক-ভাসানী সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট। ১৯৭০ সালে এ দেশের মানুষ ভোট দিয়েছিল স্বাধিকারের পক্ষে। বাংলাদেশের মাত্র দুটি বাদে সব আসনে জয়ী হয়েছিল স্বাধীকারকামী দলটি। পাকিস্তানিরা সে রায় মেনে নেওয়ার বদলে গণহত্যায় মেতে উঠলে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হয়। অর্জিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা। অর্জিত হয় মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয়। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ও বুড়িগঙ্গা পারের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে গণতন্ত্রহীনতার অভিশাপে আক্রান্ত। দেশের মালিক-মোক্তার যারা সেই জনগণের অধিকার নেই দেশ শাসনে। অন্তর্বর্তী সরকার এ অবস্থার অবসানে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে। ইতোমধ্যে বইতে শুরু করেছে নির্বাচনের হাওয়া। গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের পক্ষে আসন্ন নির্বাচনে রায় দিতে প্রস্তুত হচ্ছে দেশের মানুষ। পাশাপাশি চলছে ষড়যন্ত্রও। একাত্তরের পথ ধরে সে ষড়যন্ত্র রুখতে একই সঙ্গে প্রস্তুত হচ্ছে দেশের মানুষ। যারা নির্বাচন ঠেকাতে চায়, জনগণের ওপর নিজেদের অভিলাষ চাপিয়ে দিতে চায় নানা অজুহাতে, তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে এ দেশের সাহসী মানুষকে। দেশের জনগণের ভাগ্যোন্নয়নের স্বার্থে নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। নির্বাচনে ভোট দিতে হবে পরীক্ষিত শক্তিকে। যারা গণতন্ত্রের চেতনায় বিশ্বাসী স্বাধীনতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ তাদের জিতিয়ে আনতে হবে বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে।