নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে গত বছরের জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের ছোঁড়া ছররার গুলিতে এক চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছিলেন গাজী সালাউদ্দিন। অপর চোখেও ঝাপসা দেখতেন তিনি। মুখমণ্ডলের পাশাপাশি গলায়ও একাধিক গুলি লেগেছিল তার। চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, গলায় লাগা গুলির স্প্লিন্টার শ্বাসনালি ছুঁয়ে আছে—এটি বের করা অত্যন্ত দুঃসাধ্য।
রবিবার (২৬ অক্টোবর) রাতে শরীরে গুলির সেই স্প্লিন্টার নিয়েই মৃত্যুর কাছে হার মানলেন এই ‘জুলাই যোদ্ধা’। সোমবার (২৭ অক্টোবর) সকালে গোদনাইল বাজারে সালাউদ্দিনের জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।
নিহত সালাউদ্দিনের বড় ছেলে আমির ফয়সাল রাতুল বলেন, ‘চোখ ছাড়াও বাবার সারামুখে, গলায় ও হাতে গুলি লেগেছিল। তবে গলার মধ্যে থাকা স্প্লিন্টারগুলো বের করা সম্ভব হয়নি। ডাক্তার তাকে কথা বলতেও নিষেধ করেছিলেন। গত কয়েকদিন ধরে কাশির সঙ্গে রক্ত বের হতো।’
তিনি আরও বলেন, ‘রবিবার সন্ধ্যার পর বাবার শ্বাসকষ্ট শুরু হলে রাত ৯টার দিকে তাকে নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাই। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়ার পরই তিনি মারা যান।’
নিহত সালাউদ্দিনের বাড়ি সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইল এলাকায়। নিজের বাসার দুটি কক্ষে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে থাকতেন তিনি। অন্তর্বর্তী সরকারের গেজেটভুক্ত অতি গুরুতর আহতের তালিকায় তার নাম ছিল ১৩২ নম্বরে। সরকারিভাবে আর্থিক সহযোগিতার পাশাপাশি তার কর্মসংস্থানের জন্য মুদি দোকানের মালামালও কিনে দিয়েছিল ‘জুলাই ফাউন্ডেশন’। তবে শারীরিক অবস্থার কারণে দোকানে নিয়মিত বসতে পারতেন না সালাউদ্দিন; বড় ছেলে রাতুলই দোকান দেখাশোনা করতেন।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত বছরের জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নারায়ণগঞ্জ শহর উত্তাল হয়ে ওঠে। সে সময় ভূঁইগড় এলাকার একটি দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন সালাউদ্দিন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যোগ দেন তিনিও। ১৯ জুলাই আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হলে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। পরে নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পরদিন তাকে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচার করা হলেও এক চোখের দৃষ্টি আর ফিরে পাননি তিনি।
বিডি-প্রতিদিন/মাইনুল