মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার হরিদাসদী-মহেন্দ্রদী ইউনিয়ন বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে গিয়ে তোপের মুখে পড়ে জেলা বিএনপির নেতারা। এসময় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ঘটানো হয় বোমা বিস্ফোরণ। শুক্রবার (৯ মে) বিকেলে রাজৈর উপজেলার হরিদাসদী-মহেন্দ্রদী ইউনিয়নের কালিবাড়ি বাজারে এ ঘটনা ঘটে। এতে কয়েকজন বিএনপি নেতাকর্মী আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
একাধিক বিএনপি নেতাকর্মী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাদারীপুর জেলার পৌরসভা ও ইউনিয়নগুলোতে বিএনপির কমিটি গঠনের জন্য ২২ জন নেতাকর্মীকে দায়িত্ব দিয়েছে কেন্দ্রীয় বিএনপি। তাদেরকে নিয়ে গঠন করা হয়েছে ৭টি উপ-কমিটি। ৬টি কমিটিতে ৩ জন করে ও একটি কমিটিতে ৪ জন রয়েছেন। প্রতিটি কমিটিকে দেওয়া তালিকা অনুযায়ী ইউনিয়ন ও পৌরসভায় বিএনপির কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়। এর মধ্যে হরিদাসদী-মহেন্দ্রদী ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি গঠনের দায়িত্ব পেয়েছেন মাদারীপুর জেলা বিএনপির আহবায়ক এ্যাড.জাফর আলী মিয়া, আহবায়ক কমিটির সদস্য বজলু হাওলাদার ও এ্যাড. এইচ এম মিজানুর রহমান। তাদের অনুমতিতে শুক্রবার বিকেলে হরিদাসদী-মহেন্দ্রদী ইউনিয়ন বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনের আয়োজন করেন ওই ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি ডা. আবুল কালাম শিকদার। তবে পুনরায় সভাপতি পদ পেতে ইউনিয়নের ওয়ার্ড পর্যায়ের কোন নেতাকর্মীকেই সম্মেলনের বিষয়টি জানায়নি বলে অভিযোগ। এ নিয়ে সম্মেলনের মাঝেই জেলা বিএনপির আহবায়ক জাফর আলী মিয়ার সাথে স্থানীয় নেতাকর্মীদের তর্কবিতর্ক হয়। পরে জাফর অনুসারী ওই ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি প্রার্থী আবুল কালাম গ্রুপ ও রাজৈর উপজেলা বিএনপি নেতা আরিফ হাওলাদার গ্রুপের মধ্যে হাতাহাতির একপর্যায়ে সংঘর্ষ হয়। এসময় বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় জিয়া পরিষদের কার্যকরী সদস্য মো. জিয়াউর রহমান জিয়া ও আব্বাস শিকদারসহ কয়েকজন আহত হন। পরে কমিটি ঘোষণার জন্য ৭ দিনের সময় নিয়ে সম্মেলন শেষ করেন জেলা বিএনপির নেতারা।
এসময় মাদারীপুর জেলা বিএনপির আহবায়ক এ্যাড. জাফর আলী মিয়া, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মাদারীপুর জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য মিল্টন বৈদ্য, রাজৈর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুর রহমান লেবু কাজী, লন্ডন বিএনপি নেতা বাবু হাওলাদার সহ বিভিন্ন নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
রাজৈর উপজেলার হরিদাসদী-মহেন্দ্রদী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি প্রার্থী ডা.আবুল কালাম শিকদার অভিযোগ করে বলেন, জেলা বিএনপির আহবায়ক প্রোগ্রাম দেছে এটা আরিফ হাওলাদার মানে না। এর আগে প্রোগ্রাম থামানোর জন্য ৫০-৬০ জন নিয়ে এসে আমাকে চার্জ করেছে। আমি পারবোনা বলায় সম্মেলনের মধ্যেই তিনি আওয়ামী লীগের কিছু লোক সঙ্গে নিয়া এই গ্যাঞ্জামটা লাগাইছে। এর মধ্যে আমাদের গ্রামের জিয়া ও রেজাউল শিকদারও ছিল। জিয়া উল্টাপাল্টা কথা বলায় মাইর খাইছে। ওখানে বিএনপির ৩ গ্রুপের লোকজন ছিল। এমপি প্রার্থী মিল্টন বৈধ্য গ্রুপ, উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ওহাব মিয়া গ্রুপ ও আরিফ হাওলাদার গ্রুপ।
এ ব্যাপারে পাল্টা অভিযোগ করে আরিফ হাওলাদারকে বলেন, আবুল কালাম শিকদার আওয়ামী লীগের লোকজন দাওয়াত দেছে। আর আওয়ামী লীগের লোকজনই ওখানে বোম ফাটাইছে। পুলিশ ধাওয়া করছিল কিন্তু ধরতে পারে নাই। এটা পরিকল্পিত ভাবে আমাদের বিএনপির অনুষ্ঠান পন্ড করার জন্য আওয়ামী লীগের লোকজন এই কাজ করছে।
তবে এ বিষয়ে জানতে মাদারীপুর জেলা বিএনপির আহবায়ক এ্যাডভোকেট জাফর আলী মিয়াকে একাধিকবার মুঠোফোনে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। তাই তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য ও বিএনপি মনোনিত সাবেক এমপি প্রার্থী মিল্টন বৈদ্য বলেন, কিছু আওয়ামী লীগের লোকজন নিয়ে কমিটি করতে যাওয়া এই ঘটনা ঘটেছে। আমি চেষ্টা করেছি দুই পক্ষকে থামানোর জন্য।
রাজৈর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সঞ্চয় কুমার ঘোষ বলেন, এ ব্যাপারে আমার কিছু জানা নাই। আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। ওখানে আমাদের পুলিশ অফিসার রবিউল বাশার ডিউটিতে ছিলেন।
বিডি প্রতিদিন/এএ