লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলায় বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে স্কুলছাত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যার ঘটনায় বিচার দাবিতে উত্তাল পুরো জেলা। গ্রেফতার যুবকের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা।
বৃহস্পতিবার লালমনিরহাট টেকনিক্যাল কলেজ গেট ও হত্যাকাণ্ডের শিকার ছাত্রীর নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভোটমারী উচ্চ বিদ্যালয় গেটসহ ৬টি স্থানে পৃথক মানববন্ধনে হত্যার বিচার দাবি করা হয়।
হত্যাকাণ্ডের শিকার জান্নাতি বেগম উপজেলার চর ভোটমারী গ্রামের ফজলুল হকের মেয়ে। সে স্থানীয় ভোটমারী এসসি উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী ছিল। এই ঘটনায় গ্রেফতার যুবক বেলাল হোসেন একই গ্রামের আবু তালেবের ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, বুধবার সন্ধ্যায় স্কুলছাত্রী জান্নাতি বেগমকে বাড়িতে রেখে পাশে অসুস্থ মাকে (জান্নাতির নানিকে) দেখতে যান জান্নাতির মা। রাতে বাড়ি ফিরে মেয়েকে না পেয়ে বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে তাদের বাড়ির পাশে ভুট্টা খেত থেকে স্থানীয় যুবক বেলাল হোসেনসহ ৪-৫ জনকে পালিয়ে যেতে দেখে সন্দেহ হয় জান্নাতির মায়ের। পরে সেই ভুট্টা খেতে গিয়ে তার মেয়ের লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়দের মাধ্যমে পুলিশে খবর দেন।
পুলিশ লাশ উদ্ধার করে লালমনিরহাট সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। ভুট্টা খেতে মাটিতে পড়ে থাকা মৃত জান্নাতির মুখ থেকে গলা পর্যন্ত মাটি ঢুকিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে ঘাতকরা। স্থানীয়দের অভিযোগ, দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করে জান্নাতিকে হত্যা করেছে ঘাতকরা।
এ ঘটনায় বুধবার রাতেই বেলাল হোসেনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৪-৫ জনের বিরুদ্ধে কালীগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন মৃত জান্নাতির বাবা ফজলুল হক। এ মামলায় রাতেই পুলিশ বেলাল হোসেনকে গ্রেফতার করে। পুলিশের ধারণা ধর্ষণ নয়, গ্রেফতার বেলালের ভাইয়ের সাথে জান্নাতির ভাইয়ের দ্বন্দ্বের জেরে হত্যা করতে পারে ঘাতকরা। গ্রেফতার বেলালকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে বাকিদের গ্রেফতার ও হত্যার মূল রহস্য উদ্ঘাটনে তদন্তে নেমেছে পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মৃত স্কুলছাত্রী জান্নাতির দুই হাত পিঠমোড়া করে বাঁধা ছিল। তার একটি হাত ও একটি পা মুচড়ে ভেঙে দেওয়া হয়। মুখে গুঁজে দেওয়া হয় বালু ও মাটি। কানেও আঘাতের চিহ্ন ছিল।
এদিকে স্কুলছাত্রী জান্নাতি বেগম হত্যা মামলায় গ্রেফতার বেলাল হোসেনের বাড়ি ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগ করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা। জান্নাতি হত্যার বিচার দাবিতে জেলা শহরসহ পৃথক ৬টি স্থানে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে জান্নাতির স্কুলের সহপাঠী, শিক্ষক, এলাকাবাসী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম মালিক বলেন, জান্নাতি হত্যা মামলায় বেলাল নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। তবে নিহতের ভাইয়ের সাথে গ্রেফতার যুবকের ভাইয়ের দ্বন্দ্ব রয়েছে বলে একটি খবর পাওয়া গেছে। পারিবারিক কলহের জেরে হত্যাকাণ্ড হতে পারে বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল