জয়পুরহাটের কালাইয়ে রোপা আমন মৌসুমে ধান খেতে পচানি বা গোড়া পচা রোগ দেখা দিয়েছে। নামিদামি বিভিন্ন কোম্পানির বালাইনাশক ও পচনরোধী কীটনাশক স্প্রে করেও দমন করা যাচ্ছে না এ রোগ। এতে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন এলাকার কৃষক। ধানের ফলন নিয়েও তাদের কপালে এখন থেকেই চিন্তার ভাঁজ পড়তে দেখা গেছে।
কৃষকরা বলছেন, সপ্তাহে দু-তিন দিন এসব বালাইনাশক ও পচনরোধক কীটনাশক স্প্রে করেও দমন হচ্ছে না। এমনিতেই গত আলু মৌসুমে হিমাগারে আলু রেখে মোটা অঙ্কের লোকশান গুনতে হয়েছে। তার ওপর এবার আমন মৌসুমে এ অবস্থায় হলে তাদের কোমর-মাঝা ভেঙে যাবে। তাদের আর ঘুরে দাঁড়ানোর মতো কোনো উপায় থাকবে না।
সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় রোপা আমন ধান খেতে খোল পচা বা গোড়া পচন রোগের সংক্রমণ হয়েছে। এতে গাছগুলো কুকড়িয়ে গেছে। কৃষকরা ধান খেতে বালাইনাশক ও পচনরোধী কীটনাশক স্প্রে করছে। কিন্তু রোগ দমন হচ্ছে না। উপজেলার আহম্মেদাবাদ ইউনিয়নের হারুঞ্জা মাঠে কথা হয় কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে। তারা জানান, দুই সপ্তাহ আগে বৃষ্টি হওয়ার থেকে এ অবস্থা দেখা দিয়েছে। হঠাৎই জমিতে এ রোগ দেখা দিয়েছে। প্রতিনিয়ত জমিতে পচনরোধী কীটনাশক স্প্রে করেও রোগবালাই দমন করা যাচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে আলুর মতো আমনেও কৃষকদের লোকশান গুনতে হবে। কালাই উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলার পাঁচ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ১১ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আহম্মেদাবাদ ইউনিয়নের হারুঞ্জা গ্রামের কৃষক ফেরদাউস বারী বলেন, আমন ধান আবাদ করে সারা বছরের সংসার খরচ জোগাড় হয়। কিন্তু ধান খেতে পচন রোগের সংক্রমণে এবার ফলন নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছি। তার ওপর আমন কাটার পরই আলুর খেত লাগাতে হবে। কীভাবে কী করব বুঝতে পারছি না।
জিন্দারপুর ইউনিয়নের এলতা গ্রামের কৃষক মোকারম হোসেন বলেন, এবার সাত বিঘা জমিতে রোপা আমন ধান রোপণ করেছি। খেতে নিয়মিত যত্ন নিয়েছি, তার পরও পচন রোগে অনেক গাছ মরে গেছে। বারবার পচনরোধী কীটনাশক স্প্রে করছি। কিন্তু কাজ হচ্ছে না। কেবল খরচই বাড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে এবার আর বেঁচে থাকার কোনো পথ থাকবে না। কালাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হারুনুর রশিদ বলেন, মূলত আবহাওয়াজনিত কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দিনের বেলার প্রচ রোদের তীব্রতা আবার ভোরের দিকে কুয়াশা। অনেক নিচু জমিতে বেশি পরিমাণ পানি জমে থাকায় পচন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে গিয়ে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। নামিদামি কোম্পানির কিটনাশক স্প্রে করেও রোগ দমন হচ্ছে না; এ বিষয়ে তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী স্প্রে করতে হবে। কৃষকরা যখন তখন স্প্রে করে বলেই কাজ একটু কম হচ্ছে।