মাত্র ১৮ কাঠা বর্গা নেওয়া জমিতে ১৮ প্রজাতির দেশীয় সবজি চাষ করে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার কৃষক আবুল কালাম ওরফে কালু এখন কৃষকদের অনুকরণীয় হয়ে উঠেছেন। তিনি সীমিত জমিতে চাষাবাদের এক ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। প্রায় ১৮ বছর ধরে কৃষিকাজ করা কালু হাইব্রিড জাতের সবজি আবাদ করতেন। কিন্তু এসব ফসল রোদ বা বৃষ্টির প্রতিকূলতা সহ্য করতে না পারায় বেশ কয়েকবার ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। পরে কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে দেশীয় জাতের সবজি চাষ শুরু করেন। তবে এবার তিনি ভিন্ন কৌশলে ১৮ কাঠা জমিতে ১৮ ধরনের সবজি আবাদ করেন, প্রতি কাঠায় একটি করে ফসল। চাষ করা সবজির মধ্যে রয়েছে লাউ, কুমড়া, করলা, বরবটি, ঢ্যাঁড়শ, বেগুন, টম্যাটো, শসা, পালং, পুঁইশাক, ঝিঙে, চিচিঙ্গা, মিষ্টিকুমড়া, মরিচসহ আরও দেশীয় প্রজাতির সবজি।
আবুল কালাম জানান, এ পদ্ধতিতে চাষ করে যেমন ঝুঁকি কম, তেমনি লাভ বেশি। কোনো এক প্রজাতির ফসল নষ্ট হলেও অন্যান্য ফসল থেকে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যায়। এ বছর তার খরচ হয়েছে মাত্র ২০ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত ৫০ হাজার টাকার সবজি বিক্রি করেছেন। আশাবাদী যে ভাদ্র মাসের মধ্যে আরও ৫০-৬০ হাজার টাকার সবজি বিক্রি করতে পারবেন। এরপর শীতকালীন সবজি চাষে মনোযোগ দেবেন। শুরুতে তার পদ্ধতি দেখে অনেকেই হাসাহাসি করতেন। কিন্তু এখন তার সফলতা দেখে স্থানীয় কৃষকরা সেই পদ্ধতি অনুসরণ করছেন।
স্থানীয় কৃষক মোমিনুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথমে আমরা কালু ভাইকে নিয়ে হাসাহাসি করতাম। ভাবতাম এত রকম সবজি একসঙ্গে ফলানো সম্ভব নয়। কিন্তু এখন দেখছি ফসল যেমন ভালো হয়েছে, তেমনি বাজারে চাহিদাও বেশি। তাই আমরাও এখন তার পথ অনুসরণ করছি।’ কৃষক শামিম বলেন, ‘আমরা মাঝেমধ্যে তার খামারে গিয়ে সবজি দেখি, পরামর্শ নেই। তার দেখাদেখি আমরাও একইভাবে আবাদ করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’ মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামসুল আরেফিন বলেন, ‘আবুল কালাম একজন অনুকরণীয় কৃষক। তিনি অল্প জমিতে ১৮ প্রকার সবজি চাষ করে দেখিয়ে দিয়েছেন, সঠিক পরিকল্পনা থাকলে স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব। এই পদ্ধতিতে চাষ করলে ঝুঁকি কম হয়। আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তাকে নিয়মিত পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি।’ আবুল কালামের এ উদ্যোগ শুধু গাংনী নয়, গোটা দেশের কৃষকদের জন্য হতে পারে একটি আদর্শ মডেল।