পার্বত্য খাগড়াছড়িতে চোখ রাঙাচ্ছে ম্যালেরিয়া। হাসপাতালে বেড়েছে আক্রান্তের সংখ্যা। আক্রান্তদের অধিকাংশই সীমান্তবর্তী ও দুর্গম এলাকার বাসিন্দা। এদিকে দেরিতে চিকিৎসা নিতে আসায় রোগ নিরাময়ে বাড়ছে জটিলতা। ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন একজন। জ্বর হলে দ্রুত রোগ নির্ণয়ের অনুরোধ জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ছয় মাসে খাগড়াছড়িতে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে ৩৪০ জন। যা ২০২৪ সালের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। এর মধ্যে রোগ শনাক্তে দেরি হওয়ায় সিবিয়ার ম্যালেরিয়ার আক্রান্ত হয়ে রুবেল হোসেন নামে এক তরুণের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তদের অধিকাংশই দীঘিনালা, লক্ষ্মীছড়ি, সাজেকসহ দুর্গম ও সীমান্তবর্তী এলাকার। দুর্গম এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় দ্রুত রোগ নির্ণয় করতে না পারায় বাড়ছে জটিলতা।
আক্রান্ত রোগী ও স্বজনরা জানান, অনেকদিন জ্বরে ভোগার পর হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিচ্ছি। পাহাড়ের দুর্গম সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোয় মশার উপদ্রব বেশি হওয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।
খাগড়াছড়ির জেলার ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রক ডা. বিশ্বজিৎ চাকমা জানান, জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত এখানে ৩১৯ জন ম্যালেরিয়া রোগী শনাক্ত হয়েছে। বর্ষায় ম্যালেরিয়ার উ”চঝুঁকি রয়েছে। চলতি বছরে শুধু জুন মাসেই ১৭৬ জনের ম্যালেরিয়া শনাক্ত হয়। এ চিকিৎসক আরও জানান, ম্যালেরিয়ার ঝুঁকি এড়াতে মশার উৎসস্থাল ধ্বংস করা জরুরি। যখনই কারও জ্বর হয়, দ্রুত রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে। উপজেলা স্বাস্থ্যা কমপ্লেক্স ও কমিউনিটি ক্লিনিকে ম্যালেরিয়ার জীবাণু পরীক্ষা করা যাবে। রক্ত পরীক্ষা ও ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়া হয়। মশারি বিতরণ বাড়ানো দরকার। জনসাধারণকে সচেতন করতে হবে।
খাগড়াছড়ি আধুনিক সদর হাসপাতাল আবাসিক চিকিৎসক রিফেলবাপ্পি চাকমা জানান, ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা।
খাগড়াছড়ি জেলায় দীঘিনালা ও লক্ষ্মীছড়ি উপজেলাকে ম্যালেরিয়া জোন হিসেবে চিহ্নিত করেছে স্বাস্থ্যা বিভাগ ও ব্র্যাক। এলাকাবাসী ¯েপ্র করে মশার এ প্রজনন ধ্বংসের দাবি জানিয়েছে।
ব্র্যাকের জেলা স্বাস্থ্যাবিষয়ক ব্যবস্থাাপক প্রসেনজিত দাস জানান, ছয় মাসে আমাদের স্বাস্থ্যাকর্মীদের হিসাব অনুযায়ী ২৬৭ রোগী শনাক্ত হয়েছে। এখানে রোগীদের অধিকাংশই দুর্গম এলাকার।
খাগড়াছড়ি আধুনিক সদর হাসপাতাল আবাসিক চিকিৎসক ডাক্তার রিফেলবাপ্পি চাকমা আরও জানান, আমাদের পর্যাপ্ত ওষুধ ও রক্ত পরীক্ষার স্লাইড রয়েছে। আমাদের লক্ষ্য যাতে সিবিয়ার ম্যালেরিয়ায় কেউ আক্রান্ত না হয়। সে ক্ষেত্রে রোগী বাঁচানো যাবে না। যেহেতু পাহাড়ি এলাকা অনেকে কাজে বের হয় সে ক্ষেত্রে মশা যাতে না কামড়ায় খেয়াল রাখতে হবে। মশারি ব্যবহার করতে হবে।
ব্র্যাকের জেলা স্বাস্থ্যাবিষয়ক ব্যবস্থাাপক প্রসেনজিত দাস আরও জানান, আমাদের ৮৭১ জন স্বাস্থ্যাসেবিকা জেলায় কাজ করছেন। কর্মীরা এলাকায় গিয়ে ম্যালেরিয়া রোগী শনাক্ত, বিনামূল্যে ওষুধপত্র বিতরণ করছে। মশারির বিতরণ ও গণসচেতনামূলক কর্মকা ও চলছে। আমাদের স্বাস্থ্যাকর্মীরা চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের আমরা জেলা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করি। আমরা খাগড়াছড়ি জেলায় ৩৭ হাজার ৯৯০টি মশারি বিতরণ করেছি। চাহিদা অনুযায়ী মশারি এলে আরা বিতরণ করব। তবে আমাদের স্বাস্থ্যাকর্মীরা যখন গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে যান, সে সময় অনেকেই বাড়িতে থাকেন না।