নওগাঁর বিভিন্ন সড়ক আলোকিত করতে সোলার সিস্টেম ল্যাম্পপোস্ট স্থাপন করা হয়েছিল। তবে এখন এর ৭০ শতাংশ অকেজো হয়ে পড়েছে। এরপর সড়কে বেড়েছে চুরি-ছিনতাইসহ অপরাধ, দুর্ঘটনা। পথচারীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত জেলায় ৭ হাজার ৭৪১টি সোলার সিস্টেম ল্যাম্পপোস্ট স্থাপন করা হয়। ব্যয় হয় ৪৩ কোটি ৭২ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। এর ৭০ শতাংশ সড়কবাতি অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। সূত্র আরও জানায়, নওগাঁ সদর উপজেলার তালতলী থেকে দুবলহাটি হয়ে কাটখৈইর বাজার পর্যন্ত দূরত্ব প্রায় ১৫ কিলোমিটার। এ সড়ক দিয়েই জেলার মান্দা ও রানীনগর উপজেলার কিছু এলাকা জেলা শহরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। সন্ধ্যার পর চুরি ও ছিনতাইয়ের ভয়ে মানুষ নির্জন এ রাস্তা দিয়ে নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া চলাচল করত না। এ সড়ক আলোকিত করতে ২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে (১০ বছর আগে) জেলায় টিআর (টেস্ট রিলিফ) ও কাবিটা (কাজের বিনিময়ে টাকা) প্রকল্প থেকে প্রায় ২০০টি সোলার সিস্টেম ল্যাম্পপোস্ট (সড়ক বাতি) স্থাপন করা হয়। সন্ধ্যার পর নিজ থেকে জ্বলে ওঠে সোলার আলোকিত হতো সড়কটি। সন্ধ্যার পর ভ্যান, রিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহন ও পথচারীরা নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারত। কিন্তু ৫ বছর পর এ সড়কবাতিগুলো অকেজো হয়ে পড়ে। শুধু এ সড়কই না, জেলার বিভিন্ন সড়ক ও হাট-বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে সোলার প্যানেল চালিত ল্যাম্পপোস্ট স্থাপন করা হয়েছিল। বর্তমানে কোনোটার খুঁটি থাকলেও নেই সোলার প্যানেল ও বাল্ব। আবার সোলার প্যানেল থাকলেও নেই বাল্ব। কোথাও ল্যাম্পপোস্টের খুঁটি ঠাই দাঁড়িয়ে আছে। সোলার প্যানেল ও বাল্ব থাকলেও ব্যাটারি অকেজো হওয়ায় কোনো কাজে আসছে না।
স্থানীয় ও পথচারীরা জানান, সড়ক অন্ধকার থাকায় তারা স্বাচ্ছন্দ্যে আগের মতো আর চলাচল করতে পারছে না। সড়কে চুরি-ছিনতাই ও অপরাধসহ সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে। অন্ধকার থাকায় পথচারীদের চলাচলও কমেছে।
সদর উপজেলার গোয়ালী গ্রামের সিরাজুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ল্যাম্পপোস্ট অকেজো হয়ে পড়ে থাকায় চুরি হয়ে গেছে। সড়ক অন্ধকার থাকায় অপরাধ বেড়েছে।
মান্দা উপজেলার স্কুল শিক্ষক রিমন মোরশেদ বলেন, বাড়ি থেকে কাটখৈইর হয়ে তালতলী সড়ক দিয়ে নওগাঁ শহরে আসতে সময় কম লাগে এবং সুবিধা হয়। অনেক সময় কাজ শেষে ফিরে যেতে রাত হয়। সন্ধ্যার পর অন্ধকার হওয়ায় এ সড়কে চলাচল কমে গেছে। হাঁসাইগাড়ী গ্রামের অটোরিকশাচালক আহাদ আলী বলেন, গোয়ালী থেকে হাঁসাইগাড়ী গ্রাম পর্যন্ত বিলের মধ্য দিয়ে তিন কিলোমিটার সড়ক। এর মধ্যে কোনো বসতবাড়ি নেই। সন্ধ্যার পর শুনশান নীরব। চুরি ও ছিনতাইয়ের ভয়ে সন্ধ্যার পর অটোরিকশা নিয়ে এ সড়ক দিয়ে চলাচল করা হয় না। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া যানবাহন নিয়ে কেউ আসতে চায় না। নওগাঁ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আশেকুর রহমান বলেন, রাস্তাঘাট ও হাটবাজার আলোকিতকরণ করতে সড়কবাতিগুলো স্থাপন করা হয়েছিল। দীর্ঘদিন মেরামত না করা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ওয়ারেন্টি মেয়াদ শেষ হওয়াসহ নানা কারণে সড়কবাতিগুলো নষ্ট হয়ে যায়।
সড়কবাতি সংস্কারের জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে দ্রুত সংস্কার করা হবে।