দ্রুত কমছে রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদের পানি। তাই নৌরুটে বন্ধ হয়ে গেছে লঞ্চসহ নৌযান চলাচল। এতে প্রায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন রাঙামাটির বাঘাইছড়ি, বিলাইছড়ি, জুরাছড়ি, নানিয়ারচর, লংগদু ও বরকল উপজেলার মানুষ। এতে বিপাকে পড়েছেন এসব উপজেলার মানুষ। স্থবির হয়ে গেছে ব্যবসাবাণিজ্য। থমকে গেছে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা। বেকার হয়ে গেছেন অসংখ্য শ্রমজীবী। বরকল ও লংগদু উপজেলার কিছু অংশে ছোট নৌযান সচল থাকলেও একেবারে বন্ধ অন্য চার উপজেলার লঞ্চ চলাচল। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদে ড্রেজিং না হওয়ার কারণে প্রতি বছর এমন সমস্যার সম্মুখিন হতে হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১০টি উপজেলা মিলে রাঙামাটি। রাঙামাটির চারটি উপজেলায় সড়ক যোগাযোগ থাকলেও বাকি ছয়টি উপজেলা নদী পথে। তাই জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র ভরসা লঞ্চ ও ছোট নৌযান। বর্ষা মৌসুমে নৌপথে লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক থাকলে, সচল থাকে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি, বিলাইছড়ি, জুরাছড়ি, বরকল, লংগদু ও নানিয়ারচর উপজেলাবাসীর জীবনযাত্রা। খরায় যখন কাপ্তাই হ্রদের পানির স্থর কমতে থাকে তখন একে একে বন্ধ হয়ে যায় ছয়টি নৌরুট। সম্প্রতি রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদে দ্রুত কমে যাচ্ছে পানির স্তর। এরই মধ্যে চারটি উপজেলায় বন্ধ হয়ে গেছে লঞ্চ চলাচল। তাই বাধ্য হয়ে অনেকে বাড়তি ভাড়া গুনছে ছোট নৌযানে। হ্রদে পানি কম থাকায় স্থবির হয়ে পড়েছে উপজেলাবাসীর ব্যবসাবাণিজ্য। শুধু তাই নয়, থমকে আছে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখাও। লঞ্চ চলাচলা বন্ধ থাকায় বেকার হয়ে গেছে অসংখ্য শ্রমজীবী মানুষ।
রাঙামাটি লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি মঈন উদ্দীন সেলিম বলেন, গ্রীষ্মের আগে থেকে রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদের পানি কমতে শুরু করেছে। হ্রদের বুকে ভেসে উঠেছে শত শত ডুবোচর। তাই সাতটি পয়েন্টে নৌচলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এখন যেগুলো সচল আছে, সেগুলোও বন্ধের পথে। পানি এত দ্রুত কমেছে, ডুবোচরে লঞ্চের পাটাতন আটকে যায়। অনেক সময় হয় দুর্ঘটনা। শুধু যাত্রী নয়, উপজেলার ব্যবসায়ীরাও চরম বিপাকে। মালামাল পরিবহনে সৃষ্টি হয়েছে নানা সমস্যা। সংকট তৈরি হয়েছে দেশের একমাত্র জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র রাঙামাটি কাপ্তাই কর্ণফুলী জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদনে। এর মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে ২৩০ মেঘাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন চারটি ইউনিট। এখন মাত্র চালু রয়েছে একটি ইউনিট। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় মাত্র চার মেঘাওয়াট। রাঙামাটি কাপ্তাই কর্ণফুলী জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাইফুল রহমান বলেন, বর্তমানে রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদে পানি পরিমাণ ৮০ এমএসএল (মিন সি লেভেল)। অথচ রুলকার্ভ অনুযায়ী (সময় সূচিভিত্তিক পানি ওঠানামার মাপ) থাকার কথা ছিল ৮২ ফুট। পানি কম থাকায় জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের মাত্র একটি ইউনিট চালু আছে। বৃষ্টি না হলে পানি বৃদ্ধি পাবে না। বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করতে হবে। পাহাড়ি ছড়া ঝড়া নাথাকায় কৃতিম হ্রদে পানির উৎস অনেক কমে গেছে। ১৯৭০ সালে জাইকার সমীক্ষায় কাপ্তাই হ্রদের পানির সর্বোচ্চ স্তর পাওয়া যায় ১১৮ ফুট এমএসএল। কিন্তু এখন হ্রদ ড্রেজিং না হওয়ার কারণে হ্রদে পানি রাখার ধারণ ক্ষমতা অনেকটা কমে গেছে। রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদে পানির স্তর স্বাভাবিক রাখতে ড্রেজিংয়ের বিকল্প নেই।