নওগাঁ সদর উপজেলার তিলকপুর ইউনিয়নের দেবীপুর গ্রাম। ওই গ্রামে প্রবেশপথে দেখা মিলবে রাস্তার দুই পাশে বাঁশি তৈরির উপকরণ নল গাছ। প্রায় প্রতিটি বাড়ির বারান্দা, আঙিনা ও খোলা জায়গায় গাছের ছায়ায় কারিগররা বাঁশি তৈরি করছেন। পরিবারের নারী-পুরুষ সবাই ব্যস্ত। কেউ নল খাগড়া বা নলের গাছ কেটে বাঁশির বিভিন্ন অংশ বানাচ্ছেন। কেউ বাঁশিতে জরি ও বেলুন লাগাচ্ছেন। এ বাঁশি সাধারণত শিশুদের খেলনা হিসেবে অধিক পরিচিত। গ্রামের প্রায় ৩০০ পরিবার বাঁশি তৈরির কাজে জড়িত। দোরগোড়ায় পয়লা বৈশাখ। এ উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন স্থানে বসবে মেলা। নলের তৈরি বাঁশি ছাড়া যেন পূর্ণতা পায় না এসব মেলায়। বাড়তি চাহিদা মেটাতে কাকডাকা ভোর থেকে রাত অবধি কাজ করে যাচ্ছেন কারিগররা। এখানকার বাঁশি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে যায় দেশের বিভিন্ন স্থানে। প্রায় ৫০ বছর আগে গ্রামের বাসিন্দা মৃত আলেক মণ্ডলের হাত ধরে বাঁশি তৈরির যাত্রা শুরু। এরপর গ্রামের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে এ কাজ। বাঁশির গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পায় দেবীপুর। বাঁশি তৈরির প্রধান কাঁচামাল নল গাছ। এ গাছ কাটার পর পরিষ্কার করে কেটে রোদে শুকিয়ে অন্তত ১৫ ধাপে তৈরি হয় একেকটি বাঁশি। প্রতিটি বাঁশির তিনটি অংশ থাকে- খাপ-চুঙ্গি-কল। দেবীপুর গ্রামের বাঁশির কারিগর আলতাফ হোসেন বলেন, এখানকার বাঁশি রংপুর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, খুলনা, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা এসে কিনে নেন। এ ছাড়া গ্রামের পুরুষরা বিভিন্ন মেলায় বাঁশি নিয়ে বিক্রি করেন। প্রতি বছর প্রায় ২ কোটি বাঁশি তৈরি হয় এ গ্রামে। গ্রামের লোকজন সারা বছরই বাঁশি তৈরি করেন। বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসে তাদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। বাঁশির উদ্ভাবক আলেক মণ্ডলের ছেলে আনিসুর রহমান বলেন, এ বাঁশির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আমার বাবার হাত ধরেই এখন প্রায় ৩০০ পরিবার এ পেশায় জড়িত।
বিসিক নওগাঁর উপব্যবস্থাপক শামীম আক্তার মামুন বলেন, দেবীপুরের বাঁশি দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। ইউএনও ইবনুল আবেদীন বলেন, তাদের জন্য স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করা হবে।