রাজশাহী অঞ্চলের সবজি, ফল সংরক্ষণে উদ্যোগ নেয় সরকার। সেজন্য নির্মাণ করা হয় মিনি হিমাগার। প্রকল্পটির উদ্দেশ্য ছিল স্থানীয় কৃষক সেখানে ফল ও সবজি সংরক্ষণ করবেন। কিন্তু নির্মাণের পর অর্ধেক হিমাগার বন্ধ। যেগুলো চালু আছে, সেগুলোও ব্যক্তিগত দখলে।
রাজশাহী আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে রাজশাহী বিভাগে কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থায়নে ১১টি মিনি হিমাগার স্থাপন করে কৃষি বিভাগ। ব্যয় হয় ৪ কোটি ২৮ লাখ ৬১ হাজার টাকা। এগুলোর প্রথম তিনটি ছিল পাইলট প্রজেক্ট। এরপর আরও আটটি প্রজেক্ট বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ ও মিটার-ট্রান্সফরমার চুরির কারণে ছয়টি প্রজেক্ট বন্ধ আছে। বাকি পাঁচটি চালু থাকলেও সেগুলো ব্যবহার হচ্ছে ব্যক্তিগত হিসেবে। অন্য চাষিদের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়ে প্রান্তিক চাষিরা কম দামেই বিক্রি করে দিচ্ছেন ফসল। চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষক নাসির উদ্দিন বলেন, ‘সরকারিভাবে একটি মিনি হিমাগারের উদ্বোধন করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। কিন্তু সেখানে আম রাখতে দেওয়া হয় না। সেখানে রাখা হয় গুড়, আপেল, কমলা। যার কাছে এটি দিয়েছে, তিনি নিজেই এটি ব্যবহার করেন, অন্য কাউকে রাখতে দেন না। তাই বাধ্য হয়ে কম দামে আম বিক্রি করতে হয়েছে।’ চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে এমনই একটি হিমাগার স্থাপন করা হয়েছে। তবে সেটিতে রাখা হয়েছে পাটালি গুড়, ঝোলা গুড় ও বিদেশি ফল। ইসমাইল খান শামীম নামে এক ব্যক্তি ভরা আমের মৌসুমেও আম না রেখে রেখেছেন বিদেশি ফল ও গুড়। কৃষকের অভিযোগ, শামীমের জমিতে মিনি হিমাগারটি স্থাপন করা। প্রকল্পটিও তাঁর নামে হওয়ায় তিনি নিজেই এটি ব্যবহার করেন; অন্যদের ব্যবহার করতে দেন না। ইসমাইল খান শামীম বলেন, ‘আমি আমার গুড় রেখেছি। কেউ যদি আম রাখতে চান তাহলে তাকে সুযোগ দেওয়া হবে। তবে কেউ আম রাখেনি বা রাখতে চায়নি।’
রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার শিবপুরে আলী হোসেনকে দেওয়া হয়েছে একটি মিনি হিমাগার। তবে আট মাস হলো সেখানে মিটার নেই। মিটার চুরির কারণে সেটি বন্ধ পড়ে আছে। আরও শোচনীয় অবস্থা নাটোরের হিমাগারের। নাটোরের আহমেদপুরে সেলিম রেজা নামে একজন কৃষককে ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে পরীক্ষামূলকভাবে একটি মিনি সংরক্ষণাগার নির্মাণ করে দেওয়া হয়। নির্মাণের পর থেকে এখানে ফল রাখতে গেলে ফল সতেজ থাকে না, পচন ধরে। বর্তমানে এটি বন্ধ আছে। প্রকল্পের পরিচালক এস এম হাসানুজ্জামান বলেন, ‘মিনি হিমাগারগুলোর কোনোটিতে আম, কোনোটিতে আপেল-কমলা আবার কোনোটিতে গাজর রাখা হয়েছে। বিভাগে ১১টি হিমাগার স্থাপন করা হয়েছে। এটির একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। তারা এটির ভাড়া নির্ধারণ করে দেবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘হিমাগারগুলো একার ব্যবহারের জন্য নয়, গ্রুপের সঙ্গে মিটিং করে সবাই রাখতে পারবেন।
কৃষক যদি রাখতে চান তাহলে তারা দিতে বাধ্য। তাদের সঙ্গে আমাদের এমনই চুক্তি হয়েছে। আমাদের অনুমতি ছাড়া তারা অন্য কাজে হিমাগার ব্যবহার করতে পারবেন না। যদি করেন তাহলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।’