ক্যাম্পাসে যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে বৈদ্যুতিক শাটল গাড়ির দাবি জানিয়ে আসছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। সম্প্রতি পরিবেশবান্ধব সংগঠন ‘গ্রিন ফিউচার বাংলাদেশ’-এর উদ্যোগে পরীক্ষামূলকভাবে ক্যাম্পাসে বৈদ্যুতিক শাটল বাস চলাচলের অনুমতি দিয়েছে প্রশাসন।
গত সোমবার থেকে প্রাথমিকভাবে চারটি শাটল বাসে এ সেবা চালু করা হয়েছে। সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চারটি রুটে এ সেবা চালু রয়েছে। প্রতিটি বাস ১৪ জন যাত্রী পরিবহন করতে সক্ষম। শাটলে যাত্রার ভাড়া সর্বোচ্চ ২০ ও সর্বনিম্ন ১০ টাকা। এ ভাড়ায় শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে চলাচল করতে পারছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাধারণত ক্যাম্পাসে রিকশা দিয়ে যাতায়াত করতে হয়, যা ব্যয়বহুল এবং যানজট সৃষ্টি করে। সে তুলনায় বৈদ্যুতিক শাটল গাড়ির ভাড়া তুলনামূলক কম এবং বেশি সংখ্যক যাত্রী বহনে সক্ষম হওয়ায় যানজট নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। যদিও গত নভেম্বর থেকে তিনটি নন-এসি মিনিবাস চালু করে প্রশাসন। তবে সেগুলোর তুলনায় বৈদ্যুতিক শাটল গাড়িগুলোতে যাতায়াত করতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন শিক্ষার্থীরা। তারা বৈদ্যুতিক গাড়ির সংখ্যা পর্যাপ্ত বাড়ানোর দাবিও করেছেন। গ্রিন ফিউচার ফাউন্ডেশনের কার্যনির্বাহী সদস্য মাহাবুব তালুকদার বলেন, আমাদের পরিকল্পনা হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিরাপদ যাতায়াতের জন্য আরও ১৪টি গাড়ির ব্যবস্থা করা। এ ছাড়া কুয়েত মৈত্রী হল ও তৎসংলগ্ন হলের শিক্ষার্থীরাও এ সেবার আওতায় থাকবেন। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের জন্য চারটি এবং প্রক্টরিয়াল টিমের জন্য একটি ও গ্রিন ফিউচার ফাউন্ডেশনের মেম্বারদের জন্য একটি গাড়ি রয়েছে। প্রতিটি গাড়িতে গ্রিন ফিউচার ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের একজন করে স্বেচ্ছাসেবক (ঢাবি শিক্ষার্থী) থাকবেন এবং ভাড়া সংগ্রহ করবেন।
শিক্ষার্থীদের জন্য ‘অন-ক্যাম্পাস চাকরি’ : সংগঠনটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) খালিদ হোসেন জানান, বহির্বিশ্বে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা যেভাবে অন-ক্যাম্পাস চাকরির মাধ্যমে উপকৃত হন, আমরাও চাই ঢাবির মতো প্রতিষ্ঠানে সে সুযোগ তৈরি করতে। ক্যাম্পাসভিত্তিক অর্থনীতি গঠনের পাশাপাশি এটি শিক্ষার্থীদের বাস্তব কাজের অভিজ্ঞতা ও আত্মমর্যাদার জায়গা তৈরি করবে। আমাদের লক্ষ্য ক্যাম্পাসের ছাত্রদের উৎপাদনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান করা। আমরা শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ ও ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানের মাধ্যমে ভবিষ্যতে পেশাদার চালকদের পরিবর্তে শিক্ষার্থীদের দিয়েই শাটল চালাতে চাই। অনেক শিক্ষার্থী ইতোমধ্যে শাটল বাসের চালকের দায়িত্ব নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। বর্তমানে শাটলের ড্রাইভিংয়ে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত না করা হলেও আগ্রহীদের জন্য প্রস্তুতি চলছে বলে জানানো হয়। উল্লেখ্য, গ্রিন ফিউচার বাংলাদেশ ২০২৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। জানুয়ারি থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘গ্রিন ক্যাম্পাস, ক্লিন ক্যাম্পাস’ প্রকল্পের আওতায় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও অন্যান্য সেবামূলক কাজে শিক্ষার্থীদের নিয়োগ দিয়ে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিটি শাটল বাসে থাকা চারজন কর্মী প্রতিদিন ৩ ঘণ্টা করে কাজ করছেন। ভবিষ্যতে এ যানবাহনগুলো সৌরশক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে চার্জ দেওয়া সম্ভব হলে আরও পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থাপনায় রূপান্তর করা হবে বলে জানানো হয়েছে।