দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর অবশেষে রংপুরের শ্যামপুর চিনিকলে চলতি অর্থবছরের আখ রোপণের অনুমতি দিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়। ওই অনুমতিতে চিনিকল ঘিরে আশার আলো দেখা দিয়েছিল স্থানীয় মানুষ ও কৃষকদের মাঝে। কিন্তু অনুমতির প্রায় ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও মাঠপর্যায়ে কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। জানা গেছে, বন্ধ চিনিকল চালু করতে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে একটি বাজেট অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ে তা আটকে আছে। পাঁচ বছর আগে পতিত আওয়ামী লীগ সরকার রংপুরের শ্যামপুর সুগার মিল, পাবনা সুগার মিল, পঞ্চগড় সুগার মিল, সেতাবগঞ্জ সুগার মিল, রংপুর সুগার মিল ও কুষ্টিয়া সুগার মিলে চিনি উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। তবে অন্তর্বর্তী সরকার বন্ধ চিনিকল চালু করতে একটি টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করে। সেই অনুযায়ী শিল্প মন্ত্রণালয় অর্থবছরে রংপুরের শ্যামপুর সুগার মিল এলাকায় আখ চাষের অনুমতি দেয়। এ ছাড়া বন্ধ চিনিকল চালু করতে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে একটি বাজেট অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। অর্থ মন্ত্রণালয় অর্থ ছাড় দিলে চিনিকল এলাকায় আখ চাষ করা শুরু হবে। কিন্তু এরপর প্রায় ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত অর্থ ছাড় হয়নি। মাঠ পর্যায়ে আখ চাষেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। আর কয়েক দিন পরে আখ রোপণের মৌসুম শুরু হবে। আগে চাষিদের বীজ-সার সরবরাহ করা হতো। কিন্তু এখন পর্যন্ত চাষিরা বীজ-সার সম্পর্কে কিছুই জানেন না। এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত চাষিদের সংগঠিতও করা হয়নি। চিনিকল এলাকায় চাষিদের আখ চাষে উদ্বুদ্ধসহ বিভিন্ন পরামর্শ দিতেন চিনিকলের ইক্ষু উন্নয়ন সহকারীরা। এখন পর্যন্ত তাদের কাউকে মাঠপর্যায়ে দেখা যায়নি। ফলে চিনিকল চালু করতে পর্যাপ্ত আখ পাওয়া যাবে কি না এ নিয়ে সন্দিহান সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, বর্তমানে বন্ধ থাকায় শ্যামপুর চিলিকল জনমানবশূন্য ভূতুড়ে অবস্থায় রয়েছে। চিনিকল যন্ত্রপাতি ও যানবাহন পাহারা দেয়ার জন্য রয়েছে হাতে গোনা কয়েকজন গার্ড এবং দুই-একজন কর্মকর্তা। মিলটি যখন চালু ছিল তখন ৬ হাজারের বেশি আখ চাষি ছিলেন। চিনিকল চালু রাখতে ৬০ হাজার মেট্রিক টন আখের প্রয়োজন হয়। এ বিষয়ে বন্ধ ছয় চিনিকল টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য আলতাফ হোসেন বলেন, বন্ধ চিনিকল চালু করতে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে একটি বাজেট অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় অর্থ ছাড় দিলে চিনিকল এলাকায় আখ চাষ করা শুরু হবে। কিন্তু দীর্ঘদিনেও অর্থ ছাড়ের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ফলে আখচাষকে ঘিরে অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, চলতি অর্থবছরে আড়াই হাজার একর জমিতে আখ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। পরের বছর ৪ হাজার একরে আখ চাষ করা হবে। এই সিদ্ধান্ত শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশন উপমহাব্যবস্থাপক (অর্থ) ইশতিয়াক হোসেন রাজীব বলেন, প্রায় তিন মাস আগে অর্থ বরাদ্দ চেয়ে প্রস্তাবনা অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া দেয়নি। অর্থ মন্ত্রণালয় অর্থ ছাড় দিলেই বন্ধ চিনিকলগুলো চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে।