প্রথমবারের মতো নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলে এক মাসের জন্য প্রজনন মৌসুমে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞার খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। এমন খবরে সরকারের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে জেলেরা সহ হাওরবাসী। কিন্তু আদৌ বাস্তবায়ন হবে কিনা তা নিয়ে রয়েছে সন্দেহ।
তবে এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে কমে যাওয়া দেশীয় মাছের উৎপাদন বাড়বে বলে জানায় মৎস্য অধিদপ্তর। জেলেরাও জানিয়েছে, খাদ্যের নিশ্চয়তা পেলে আরও বেশি সময় অপেক্ষা করতে পারবে তারা।
নেত্রকোনা জেলার বিশাল হাওরাঞ্চলে একমাত্র ধান আর মাছই অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি। কিন্তু দিন দিন প্রাকৃতিক উপায়ে উৎপাদিত একমাত্র মিঠা পানির দেশীয় মাছ আশঙ্কা জনকভাবে কমে যাচ্ছে। ফলে পেশা হারাচ্ছে অনেক জেলে পরিবার। কলকারখানা বিহীন জেলায় কৃষির পর মাছের ওপর নির্ভরশীল হলেও কমতে শুরু করেছে এই মৎস্য সম্পদ। এই সম্পদকে কাজে লাগিয়ে দেশীয় মাছের উৎপাদন বাড়াতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। হাওরাঞ্চলে এবং প্লাবণভূমিতে প্রজনন সময়ে একমাস মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারির খসড়া প্রনয়ন করেছে।
মৎস্য দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ছোট বড় ৯৪ টি হাওর রয়েছে। বর্ষা মওসুমে হাওরে পানি ঢুকতে শুরু করে। এর মধ্যে জ্যৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি (২৯ মে) থেকে আষাঢ় মাসের মাঝামাঝি (৩০ জুন) পর্যন্ত হাওরে মাছের প্রজনন সময় থাকে। মা মাছগুলো নতুন পানিতে ডিম ছাড়ে। যে কারণে এ সময়টা মাছ ধরা বন্ধ রাখতে পারলেই বাড়বে মাছের উৎপাদন। এরই মধ্যে হাওরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় মৎস্য অধিদপ্তরের সচেতনতা উদ্যোগে চলছে মাইকিং। এদিকে এমন সিদ্ধান্তে জেলেরাও খুশি। তবে তারা চান খাদ্যের নিশ্চয়তা। খাদ্য পেলে দুই থেকে তিনমাস অপেক্ষা করতে রাজি। কিন্তু প্রচারণা চললেও মাছ ধরা বন্ধ করেনি জনসাধারণ।
নেত্রকোনা সদরের সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা দেবাশীষ সরকার জানান, সরকারের এমন যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারলে আমরা বর্তমানের চেয়ে ১২ থেকে ১৩ হাজার মেট্রিকটন মাছ উৎপাদন বাড়াতে পারবো। ইতোমধ্যে প্রচার প্রচারণা চলছে। মোবাইল কোর্টও চলবে। প্রকৃত জেলেদের মাঝে জেলে কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। প্রণোদনা বাস্তবায়ন করা গেলে আমরা উদ্যোগটি সফল করতে পারবো। জেলায় মৎস্যজীবী রয়েছে ৫৪ হাজার ৬৯৫ জন। তারমধ্যে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৪৭ হাজার ১৩৫ জন।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. রাফিকুজ্জামান জানান, মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে মাছের প্রজনন মৌসুমে মাছ ধরা বন্ধের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে একটি খসড়া গেজেট তৈরি করা হয়েছে। এটি কার্যকর করা হলে পর্যাপ্ত মাছ হবে। এই জেলায় তেমন কোন ইন্ড্রাস্টি নেই। এই সম্ভবনাময় খাতকে কাজে লাগিয়ে ইন্ডাস্ট্রি গড়া সম্ভব। তখন সারা বছর তারা আর বেকার থাকবে না। কলকারখানা বিহীন জেলার সম্ভাবনাময় খাতটিকে কাজে লাগিয়ে জেলার আর্থসামজিক পরিবর্তন সম্ভব।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল