দেশে বাড়তে শুরু করেছে কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। ইউরোপ, আমেরিকা, থাইল্যান্ড, ভারতসহ প্রতিবেশী দেশগুলোতেও দ্রুত বাড়ছে রোগী। দেশে কভিডের থাবায় প্রাণ হারিয়েছে মানুষ। সংক্রমণের খবরে স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী মাস্ক, স্যানিটাইজারের দাম বাড়ানোর সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
রাজধানীর বাবুবাজারের পাইকারি মাস্কের বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এরই মধ্যে পাইকারি পর্যায়ে মাস্কের দাম বাড়িয়ে দ্বিগুণ করেছেন একদল ব্যবসায়ী। এতে বিপাকে পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। অতিরিক্ত দামে মাস্ক কিনে পরতে হচ্ছে তাদের। করোনাভাইরাস সংক্রমণে মাস্কের চাহিদা বাড়ায় ভিড় বাড়ছে খুচরা ব্যবসায়ীদের।
কমলাপুর রেলস্টেশনের কাছে মাস্ক বিক্রি করেন সাজেদুল। তিনি জানান, আগে ৬০-৬৫ টাকা দামে প্রতি বক্স মাস্ক কিনলেও আজকে বাজারে এক বক্স বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। কোনো ধরনের দামাদামির ধার ধারছেন না পাইকারি ব্যবসায়ীরা। মহাখালী টিবি গেটের পাশের আরেক মাস্ক ব্যবসায়ী সাগর হোসেন বলেন, আগে ১ হাজার সার্জিক্যাল মাস্কের দাম ছিল ৯০০ টাকা। গত সপ্তাহে দাম বেড়ে হয়েছে ১৬০০ টাকা। পাইকারি বাজারে মাস্কের দাম বাড়ায় খুচরা বাজারেও দাম বাড়িয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে। আগে ১০ টাকায় পাঁচটি সার্জিক্যাল মাস্ক বিক্রি করলেও এখন তিনটি করে বিক্রি করতে হচ্ছে। সার্জিক্যাল মাস্কের পাশাপাশি দাম বেড়েছে এন-৯৫ মাস্কেরও। এতদিন ১০ টাকা দরে এই মাস্ক বিক্রি হলেও হঠাৎ করে প্রতি পিস মাস্কের দাম হয়েছে ১৫-২০ টাকা। এ সুযোগে হ্যান্ড স্যানিটাইজারেরও দাম বাড়ানো হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মাসে করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়েছে ২৩২ জন, মারা গেছে সাতজন। প্রায় প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবর আসছে। করোনা সংক্রমণ বাড়তে শুরু করায় আতঙ্কিত না হয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানার পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান। তিনি বলেন, রোগ নির্ণয়ে আমাদের কার্যক্রম চলমান। তিনটি মাধ্যমে আমরা করোনার নমুনা পরীক্ষা করছি। চিকিৎসার জন্য ডেডিকেটেড হাসপাতাল ও বিভিন্ন হাসপাতালে ডেডিকেটেড ইউনিট করেছি। রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বর্তমান প্রস্তুতি রোগীর চাপ ও বৈশ্বিক পরিস্থিতি অনুযায়ী যথেষ্ট। বাংলাদেশে যে পরিমাণ করোনা রোগী এবং পরীক্ষার যে হার, তাতে বোঝা যাচ্ছে, মানুষের মধ্যে সেই মাত্রায় লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। করোনা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু এখনো দেখছি না। সংক্রমণ প্রতিরোধে ১১ দফা নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর বলেন, ভাইরাসজনিত সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। করোনাভাইরাসের কয়েকটি নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এরই মধ্যে চিহ্নিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের বিস্তার প্রতিরোধে দেশের সব স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরে নজরদারি ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়গুলো জোরদার করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সংক্রমণ প্রতিরোধে জনসাধারণের করণীয় বিষয়ের মধ্যে রয়েছে- জনসমাগম যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন এবং উপস্থিত হতেই হলে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করুন। শ্বাসতন্ত্রের রোগগুলো থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য মাস্ক ব্যবহার করুন। হাঁচি বা কাশির সময় বাহু বা টিস্যু দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে রাখুন। ব্যবহৃত টিস্যুটি অবিলম্বে ঢাকনাযুক্ত ময়লা ফেলার ঝুড়িতে ফেলুন। ঘন ঘন সাবান ও পানি কিংবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলুন (অন্তত ২০ সেকেন্ড)। অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ ধরবেন না। আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন এবং কমপক্ষে ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখুন। সন্দেহজনক রোগীদের ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হলে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত বাড়িতে থাকতে হবে। রোগীর নাক-মুখ ঢাকার জন্য মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। রোগীর সেবাদানকারীদেরও সতর্কতা হিসেবে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।