সুউচ্চ মেঘালয়ের কোলঘেঁষে নয়নাভিরাম নীল জলরাশি লেকটিকে চোখ ধাঁধানো এক সৌন্দর্যের আধারে পরিণত করেছে। আর সেই মোহে প্রকৃতিপ্রেমীরা বারবার ছুটে আসেন এখানে। বিকালের মিষ্টি রোদে লেকের জলে ভেসে ওঠা পাহাড়ের প্রতিচ্ছবি এনে দেয় এক কাব্যিক আবহ। সুন্দরের এই বিচ্ছুরণই ভ্রমণপিপাসুদের দূর করে দেয় দুর্গম পথের ক্লান্তি। প্রকৃতির সান্নিধ্যে সময় কাটিয়ে ভালো লাগার অপার অনুভূতি নিয়ে নীড়ে ফেরেন পর্যটকরা।
এই হচ্ছে সুনামগঞ্জের পর্যটন স্পট নীলাদ্রি লেকের সৌন্দর্যের সারকথা। জেলার তাহিরপুর উপজেলার টেকেরঘাট এলাকায় অবস্থিত লেকটি এখন পর্যটকদের আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু। মূলত চুনাপাথরের পরিত্যক্ত খনি থেকে সাম্প্রতিক সময়ে এই লেকের সৃষ্টি। মেঘালয় পাহাড়ের একেবারে ঢালুতে হওয়ায় সহসা নজর কাড়ে প্রকৃতিপ্রেমীর। এখন দূরদূরান্তের পর্যটকদের পদচারণে মুখর থাকে নীলাদ্রি লেক।
বর্ষা মৌসুমে নীলাদ্রি লেকে বেড়ে যায় দূরদূরান্তের পর্যটকদের আনাগোনা। হাউস বোট আর ইঞ্জিন নৌকায় টাঙ্গুয়ার হাওরের নীল জলে অবগাহন করে হাজারো পর্যটক রাত্রিযাপন করেন নীলাদ্রি লেকের পাশে। অনেকেই আসেন দুর্গম সড়কপথে।
ঘুরতে আসা ঢাকার ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের জনৈক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা বন্ধুরা মিলে হাউস বোটে করে নীলাদ্রি লেকে এসেছি। এর আগে টাঙ্গুয়ার হাওর ঘুরে দেখেছি। আমরা হাওর, পাহাড় আর লেক দেখে বিমোহিত। তবে পর্যটকদের সুযোগ-সুবিধার বিষয়টি এখনো নিশ্চিত হয়নি। পর্যটক মামুন বলেন, আমরা বন্ধুরা মিলে মোটরসাইকেলে করে সিলেটের জাফলং থেকে নীলাদ্রি লেকে এসেছি। এখানকার প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখার পর মনটা ভালো হয়েছে। মূলত ভ্রমণ করলে ডিপ্রেসন দূর হয়। মন-মেজাজ ফুরফুরে হয়ে ওঠে। এখানে এসে অনাবিল আনন্দ পাচ্ছি।
এদিকে রামসার সাইট খ্যাত টাঙ্গুয়ার হাওরে অবাধ পর্যটন নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে বিতর্ক। শত শত হাউস বোট আর নৌযানে করে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক আসেন টাঙ্গুয়ার হাওর দেখতে। নিয়ম না মেনে উচ্চৈঃস্বরে গানবাজনা করেন অনেকে। হাওরের পানিতে ফেলেন পলিথিনসহ নানা পরিবেশ বিনষ্টকারী বর্জ্য। এই ধারা অব্যাহত থাকলে হাওরটি অস্তিত্ব সংকটে পড়বে বলে মনে করেন পরিবেশকর্মীরা। তাদের দাবি, টাঙ্গুয়ার হাওরকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে, ইকো-ট্যুরিজম বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই।
পরিবেশ আন্দোলনকর্মী সালেহীন চৌধুরী শুভ বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওরসহ তাহিরপুরের দৃষ্টিনন্দন বিভিন্ন স্থানকে কেন্দ্র করে যে পর্যটনশিল্পের জন্ম হয়েছে সেটি স্থানীয় অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক। তবে এটি হতে হবে পরিবেশবান্ধব। পরিবশের সুরক্ষায় সরকারি যে নীতিমালা রয়েছে সেটি প্রতিপালনে পর্যটকদের বাধ্য করতে হবে। অন্যথায় এখানকার পরিবেশ-প্রতিবেশ, জীববৈচিত্র্য আরও সংকটাপন্ন হয়ে পড়বে।
তিনি বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওর নিকট অতীতেও মাছ আর পরিযায়ী পাখির অভয়ারণ্য ছিল। কিন্তু ইঞ্জিনচালিত নৌযানে পর্যটকদের অবাধ বিচরণের ফলে এখন আর এখানে পাখি আসে না। মাছও আগের মতো পাওয়া যায় না। তাই এসব সম্পদ রক্ষায় এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে। তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবুল হাসেম বলেন, পর্যটকদের অবাধ বিচরণের কোনো সুযোগ নেই টাঙ্গুয়ার হাওরে। একটা নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে নৌযানগুলোকে অবস্থান করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যারা হাওরের মূল অংশে ঢোকার চেষ্টা করেন, তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
পর্যটকদের সুযোগসুবিধার ব্যাপারে তিনি বলেন, ঘুুরতে আসা পর্যটকদের সুযোগসুবিধা নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। রাস্তাঘাটের সংস্কারের পাশাপাশি শৌচাগার নির্মাণের উদ্যোগ রয়েছে প্রশাসনের।