লালপেড়ে হলুদ শাড়ি পরে রংপুর মহানগরীর বুকে বেশ কয়েকটি স্থানে উঁকি মারছে দুঃখনাশী গাছ অশোকের ফুল। নগরীর কারমাইকেল কলেজের প্রধান ফটকের সামনে, পুরাতন রংপুর খ্যাত মাহিগঞ্জ বাজার সড়ক, ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ লিংক রোড, রংপুর জিলা স্কুলের পেছনে রহমত বাড়ি ,বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন চোখে পড়বে এই ফুল। অশোক গাছটি সাধারণত ফুলের জন্য বিখ্যাত। হেমন্তকাল অবধি গাছে ফুল ফুটতে দেখা যায়। তাছাড়াও শীতকালেও অল্প সংখ্যায় ফুল ফুটতে দেখা যায়। গ্রীস্মে খুব কম দেখা যায় অশোকের ফুল। অশোক সত্যিকার অর্থেই দুঃখহারী। আমাদের এই দেশি বৃক্ষটির খ্যাতি সুপ্রাচীন। কাব্যে বহুল ব্যবহার ছাড়াও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সঙ্গে অশোক যুক্ত। এই তরুতলেই মহামতি গৌতম বুদ্ধের জন্ম। ফুলগুলো সুগন্ধিযুক্ত, বিশেষ করে রাতে তীব্র সুবাস ছড়ায়। ফুল সাধারণত ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসে ফোটে। গাছটির ফলগুলো চ্যাপ্টা, লম্বাটে শুঁটি আকৃতির হয় এবং প্রতিটি শুঁটিতে কয়েকটি বীজ থাকে।
বাংলা একাডেমির সহপরিচালক এবং বেগম রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কৃষিবিদ আবিদ করিম মুন্না অশোক গাছ ও ফুল সম্পর্কে জানান, অশোক মাঝারি আকৃতির ছায়াদানকারী চিরসবুজ বৃক্ষ। গাঢ়-সবুজ পাতাগুলো দীর্ঘ, চওড়া ও বর্শাফলাকৃতির হয়ে থাকে। তাজা ফুলের রঙ কমলা কিন্তু বাসি ফুল লাল রঙ ধারণ করে। অশোক ফল বড় শিমের মতো চ্যাপ্টা, পুরু এবং বেগুনি রঙের হয়। অশোক ফলের বীজ থেকে সহজেই চারা জন্মায়। বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে এর ব্যবহার দেখা যায়। ‘অশোক’ নামের অর্থ ‘দুঃখহীন’, যা শান্তি ও আনন্দের প্রতীক। অশোক গাছের বিভিন্ন অংশ, যেমন- বাকল, ফুল, পাতা এবং বীজ ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় আয়ুর্বেদ, ইউনানি চিকিৎসা পদ্ধতিতে বহু রোগের নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। উল্লেখযোগ্য ঔষধি ব্যবহার হলো- অশোক গাছের বাকলে ব্যথানাশক ও প্রদাহনাশক উপাদান রয়েছে। তাছাড়াও কিছু গবেষণায় এর জীবাণুনাশক বৈশিষ্ট্যও পাওয়া গেছে। অশোক ফুলের নির্যাস ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে। বাকলের নির্যাস ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা, যেমন- ব্রণ ও অন্যান্য দাগ নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। হজমক্ষমতা বৃদ্ধিতে এবং পেটের সমস্যায় উপকারী। অশোক গাছের কাঠ শক্ত হলেও তা খুব বেশি টেকসই নয়। তাই এটি সাধারণত ছোটখাটো জিনিসপত্র, প্যাকিং কাঠ, ভেনিয়ার এবং প্লাইউড তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। শুকনো কাঠ জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যেতে পারে। হিন্দু ও বৌদ্ধদের কাছে এ তরু অত্যন্ত পবিত্র।
কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অশোক নিয়ে লিখেছেন,
‘তোমার অশোকে কিংশুকে
অলক্ষ্য রঙ লাগল আমার
অকারণের সুখে।’
বিডি প্রতিদিন/এএ