যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সুরক্ষার সঙ্গে সম্পর্কিত 'অতি গোপনীয়' ও 'গোপনীয়' নথি অবৈধভাবে নিজের কাছে রাখার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক, প্রখ্যাত পররাষ্ট্রনীতি এবং প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ অ্যাসলে জে টেলিস। তার বিরুদ্ধে চীনের সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে গোপনে দেখা করারও গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইস্টার্ন ডিসট্রিক্ট অফ ভার্জিনিয়ার অ্যাটর্নি অফিসের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার এই গ্রেফতারের খবর নিশ্চিত করা হয়। ৬৪ বছর বয়সী টেলিস দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করেছেন। তিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের অধীনে জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলেও দায়িত্ব পালন করেছেন। গ্রেফতারের সময় তিনি মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা (অবৈতনিক) এবং প্রতিরক্ষা দফতরের (পেন্টাগন) একজন কনট্রাক্টর হিসেবে যুক্ত ছিলেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এফবিআই গত শনিবার ভার্জিনিয়ায় টেলিসের বাসভবনে তল্লাশি চালায়। সেখানে তার বাড়ি থেকে এক হাজারেরও বেশি পাতার 'টপ সিক্রেট' ও 'সিক্রেট' স্তরের নথি উদ্ধার হয়েছে। এই নথিগুলির মধ্যে মার্কিন সামরিক বিমানের সক্ষমতা সম্পর্কিত সংবেদনশীল তথ্যও রয়েছে বলে অভিযোগ।
এফবিআইয়ের হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে, অভিযুক্ত টেলিস গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের মধ্যে মার্কিন প্রতিরক্ষা ও স্টেট বিল্ডিং থেকে গোপন নথি প্রিন্ট করে একটি ব্যাগে ভরে নিয়ে যান। এরপর শনিবার তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।
অবৈধভাবে নথি রাখার পাশাপাশি টেলিসের বিরুদ্ধে চীনের সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে গোপনে একাধিকবার দেখা করার গুরুতর অভিযোগও আনা হয়েছে।
আদালতে দায়ের করা এফবিআইয়ের নথিতে বলা হয়েছে, গত কয়েক বছরে তিনি চীনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিকবার দেখা করেছেন। এর মধ্যে ভার্জিনিয়ার এক রেস্তোরাঁয় অনুষ্ঠিত বৈঠকও রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, এই সাক্ষাতের সময় তাকে একবার খাম নিয়ে রেস্তোরাঁয় ঢুকতে দেখা গেলেও ফেরার সময় সেই খাম তার কাছে ছিল না। আরও উল্লেখ করা হয়েছে, গত বছর এপ্রিল মাসে এক আলাপচারিতায় তাকে ইরান-চীন সম্পর্ক এবং নতুন প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে শোনা যায়। এমনকি গত সেপ্টেম্বরে অন্য এক বৈঠকে তিনি চীনা কর্মকর্তাদের কাছ থেকে উপহার হিসেবে গিফট ব্যাগও পেয়েছিলেন।
ভার্জিনিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় জেলার মার্কিন অ্যাটর্নি লিন্ডসে হ্যালিগান জানিয়েছেন, এই অভিযোগ দেশের জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষার জন্য ব্যাপক হুমকির কারণ। তিনি বলেন, আমরা মার্কিন জনগণকে অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক দুই ক্ষেত্রে সব ধরনের হুমকি থেকে রক্ষা করতে প্রতিশ্রতিবদ্ধ। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য আমরা আইন মেনে চলব।
অভিযোগের বিষয়ে অ্যাসলে জে টেলিস নিজে কোনো মন্তব্য না করলেও তার আইনজীবী ডেবোরা কার্টিস জানিয়েছেন, তারা শুনানির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন এবং সেখানে প্রমাণ উপস্থাপন করা হবে। তবে, দোষী সাব্যস্ত হলে ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই বিশ্লেষকের সর্বোচ্চ দশ বছরের কারাদণ্ড এবং দুই লাখ ডলার পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।
সূত্র: বিবিসি
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল