গোপন প্রতিরক্ষা নথি নিজের কাছে রাখার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় বংশোদ্ভূত এক কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার নাম অ্যাশলি টেলিস। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞ।
তার বাড়ি থেকে এক হাজারেরও বেশি ‘অতি গোপনীয়’ সরকারি নথি উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে মার্কিন বিচার বিভাগ।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ (ডিওজে) জানায়, ৬৪ বছর বয়সী টেলিসের বিরুদ্ধে জাতীয় প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত তথ্য অবৈধভাবে সংরক্ষণের অভিযোগ আনা হয়েছে। ডিওজে আরও জানায়, দোষী প্রমাণিত হলে টেলিসের সর্বোচ্চ ১০ বছর কারাদণ্ড এবং আড়াই লাখ ডলার জরিমানা হতে পারে।
ডিওজে আরও জানায়, শনিবার ভার্জিনিয়ার ভিয়েনায় টেলিসের বাসায় তল্লাশি চালিয়ে এক হাজারেরও বেশি ‘শ্রেণিবদ্ধ নথি’ উদ্ধার করা হয়, যেগুলোর ওপর ‘অত্যন্ত গোপনীয়’ ও ‘গোপনীয়’ চিহ্নের সিল ছিল। নথিগুলো তিনি তার বাড়িতে ফাইল ক্যাবিনেট ও আবর্জনার ব্যাগে লুকিয়ে রেখেছিলেন’।
এ বিষয়ে টেলিস নিজে কোনও মন্তব্য করেননি। তার আইনজীবী ডেবোরা কার্টিস মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেন, আমরা আদালতের শুনানির অপেক্ষায় আছি, যেখানে প্রমাণ উপস্থাপনের সুযোগ পাব।
অন্যদিকে, ভার্জিনিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় জেলা অ্যাটর্নি লিন্ডসি হ্যালিগান বলেন, এই মামলার অভিযোগগুলো আমাদের নাগরিকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য গুরুতর ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে।
ভারতের মুম্বাইয়ে বেড়ে ওঠা অ্যাশলি টেলিস পড়াশোনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যান। তিনি বহু বছর ধরে মার্কিন সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছেন ও বর্তমানে দেশটির পররাষ্ট্র দফতরে জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
টেলিস মার্কিন সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ প্রশাসনের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য ছিলেন ও বর্তমানে প্রতিরক্ষা দফতরের অফিস অব নেট অ্যাসেসমেন্টের কনট্রাক্টর হিসেবে কাজ করছেন। ট্রাম্প প্রশাসন এই দফতরের নাম পরিবর্তন করে ‘ডিপার্টমেন্ট অব ওয়ার’ করেছে।
আদালতের নথি অনুযায়ী, টেলিসের পদ তাকে শীর্ষ গোপন তথ্য দেখার অনুমতি দেয়। রয়টার্সের পাওয়া ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবআই) শপথপত্রে বলা হয়েছে, গত দুই মাসে টেলিসকে একাধিকবার পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা দফতরে ঢুকে অত্যন্ত গোপনীয় নথি প্রিন্ট করতে দেখা গেছে, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বিমান সক্ষমতা সম্পর্কিত তথ্যও ছিল।
নিরাপত্তা ক্যামেরায় তাকে ভবনগুলো থেকে ব্রিফকেস বা ব্যাগ হাতে বের হতে দেখা গেছে।
এফবিআই জানায়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে টেলিস বহুবার চীনা সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে ভার্জিনিয়ার ফেয়ারফ্যাক্সের এক রেস্তোরাঁয় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে তাকে একটি ম্যানিলা খাম হাতে আসতে দেখা যায়, তবে বের হওয়ার সময় সেটি তার সঙ্গে ছিল না বলে তদন্ত নথিতে উল্লেখ রয়েছে।
টেলিস অতীতে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত-চীন সম্পর্ক নিয়ে দেশি ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে নিয়মিত মন্তব্য করে এসেছেন। তিনি বর্তমানে কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস’র টাটা চেয়ার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যাফেয়ার্স পদে আছেন।
চলতি মাসের শুরুর দিকে তিনি ভারতীয় সাংবাদিক করণ থাপারের এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প প্রশাসনের ভারতের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ ও ওয়াশিংটনের কাছে নয়াদিল্লির কৌশলগত গুরুত্ব নিয়ে কথা বলেন। সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স
বিডি প্রতিদিন/একেএ