“স্বাধীনতা তুমি তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীর শানিত কথার ঝলসানি লাগা সতেজ ভাষণ” কবিতার পংক্তিটি যেন শুধু কবিতায়ই রয়ে গেল।
জনগণের অপেক্ষার যেন শেষই হচ্ছে না।
রাজা হওয়া, মন্ত্রী-এমপি হওয়া কিংবা রাজনৈতিক দলের নেতা হওয়া সাধারণ জনগণের চাহিদা নয়। তারা চায়, আদর্শ একটি রাষ্ট্র-পরিচালনা ব্যবস্থা। যেখানে রাজনৈতিক দলের নেতারা জবাবদিহিতা করতে বাধ্য থাকেন, জনগণের সাধারণ নিরাপত্তা ও কথা বলার সুযোগ অবারিত থাকে, পেশি শক্তি ও অশ্লীল কথামালার চর্চা নেতারা করবেন না, রাজনীতিবিদরা গোপন চাঁদাবাজির মাধ্যমে বিলাসী জীবন যাপন করবেন না।
জনগণ প্রত্যাশা করে, রাজনীতিবিদরা নির্বাচিত হয়ে প্লট, ফ্ল্যাট ও কম দামে গাড়ি কেনার আইন প্রণয়নে ব্যস্ত হবেন না।
জনগণ আশা করে, ব্যাংকের গচ্ছিত টাকা ও রাষ্ট্রের সম্পদ রাজনীতিবিদরা কতিপয় সহি বেশী অনৈতিক ব্যবসায়ীদের সাথে মিলেমিশে লুট করবেন না, রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো হবে মানুষের আশ্রয়স্থল, ন্যায্যতা প্রাপ্তির ঠিকানা এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও তাদের উচ্চ পদাধিকারীরা নিয়মিত জবাবদিহিতার মুখোমুখি থাকবেন।
সমাজের ত্যাগী, সংগ্রামী, সৎ বুদ্ধিদীপ্ত মানুষগুলো রাজনীতিবিদ হোক, নেতা হোক, মন্ত্রী-এমপি হোক জনগণ এটাই কামনা করে। যারা নিত্যপণ্য, আবাসন, চিকিৎসা ও শিক্ষার ন্যূনতম সুযোগ নিশ্চিত করবে।
সদ্য সমাপ্ত ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান সাধারণ জনতার মাঝে আশা জাগিয়ে আজ ম্রিয়মাণ।
যে তরুণ ঝলমল করছিল কথায়, কাজে ও সংগ্রামে, সে আজ রাজনীতির গ্যাঁড়াকলে নিপতিত, রাজনৈতিক পদ-পদবি, মন্ত্রী-এমপি হওয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতায় মগ্ন। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, আশা-জাগানিয়া তরুণরা আজ লোভাতুর রাজনীতির জন্য, পদের জন্য, প্রার্থিতার জন্য, তাও আবার গোপন আঁতাতের মাধ্যমে, যেখানে আদর্শের কোনো প্রাধান্য নেই, আছে শুধু সুবিধা ভোগের প্রয়াস। যে তরুণ আকৃষ্ট করেছিল মানুষকে তার কথা দিয়ে, স্বপ্ন শুনিয়ে, তার মুখে আজ কখনও কখনও অশ্লীলতার বাক্য বা, অগ্রজদের অসম্মান করে নিজেকে জেতানোর চেষ্টা, আবার কখনও অগ্রজরাও মারমুখী। এ অবস্থা কাম্য নয়, দেশের জন্যও মঙ্গলজনক নয়।
অভিজ্ঞদের পাশাপাশি তরুণদের শক্তি ও মেধার মিশেলে যে নেতৃত্ব, তা-ই একটি জাতিকে এগিয়ে নেয়ার নিয়ামক।
কিন্তু আমরা যাচ্ছি কোথায়, উচ্ছিষ্ট ভোগের রাজনীতির দিকে নাকি আদর্শের রাজনীতির দিকে? নির্বাচনের প্রার্থিতা কি নীতি আদর্শের মাপকাঠিতে বিবেচিত হবে, নাকি গড্ডলিকা প্রবাহে সব ভেসে যাবে?
বাস্তবতা আজ হতাশাজনক। সংগ্রামের সাহসী তরুণ আজ গোঁজামিলের রাজনীতিতে হাবুডুবু খাচ্ছে।
আমাদের উত্তরাধিকাররা ব্যক্তিগত লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে উঠে সততার বলে বলীয়ান হয়ে এগিয়ে যাক। বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের নিজস্ব জাতিসত্তা, মূল্যবোধ ও স্বার্থকে সর্বাগ্রে অগ্রাধিকার দিয়ে আগামীর বাংলাদেশ হোক দূরদৃষ্টিসম্পন্ন মেধাবী মানুষের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজনীতির চারণভূমি। তরুণরা ফিরে পাক তাদের জন্য লাগসই পথরেখা।
বিডি প্রতিদিন/আশিক