বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের সহায়তায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর ও কুমিল্লার হোমনা উপজেলায় সুদ ও সার্ভিস চার্জ মুক্ত ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ করা হয়েছে। সোমবার নবীনগরের সীমানাঘেষা বাঞ্ছারামপুরের আকানগর মাদ্রাসা মাঠে ৭৭তম ঋণ বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা গ্রুপের উপদেষ্টা ময়নাল হোসেন চৌধুরী এবং বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এম নাসিমুল হাই।
দুই উপজেলার ৩২৩ জন উপকারভোগীর মাঝে ৫৩ লাখ ১৫ হাজার টাকা ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ করা হয়েছে। ক্ষুদ্রঋণ হাতে পেয়ে উপকারভোগীদের চোখে মুখে আনন্দের ঝিলিক দেখা গেছে। প্রথমবারের মতো ১৫ হাজার টাকা করে ঋণ পেয়েছেন ৭৮ জন, দ্বিতীয়বারের মতো ১৫০০০ টাকা করে পেয়েছেন ১৫১ জন, তৃতীয়বারের মতো ২০ হাজার টাকা করে ঋণ পেয়েছেন ৯৪ জন।
উপকারভোগীদের উদ্দেশে এম নাসিমুল হাই বলেন, সুদ ও সার্ভিস চার্জ মুক্ত ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ সেই কাজটি করছে। দরিদ্র পরিবারের নারীদের স্বাবলম্বী করতে সুদ ও সার্ভিস চার্জ মুক্ত ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ করছে। তিনি আরও বলেন, আমরা বিশ্বাস করি এই ঋণ নিয়ে আপনারা স্বাবলম্বী হবেন। আপনাদের সফলতার ওপর নির্ভর করবে আমাদের সফলতা। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান স্যার ও তাঁর পরিবারের জন্য আপনারা দোয়া করবেন।
ময়নাল হোসেন চৌধুরী বলেন, বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের এই ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে আপনারা সৎ-ভাবে ব্যয় করবেন। নিজেরা স্বাবলম্বী হবেন এবং সন্তানকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করবেন। এই টাকা বাংলাদেশের আইন পরিপন্থি কোন কাজে ব্যয় করবেন না। বসুন্ধরা গ্রুপ সব সময় দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়ায়। আপনাদের পাশেও দাঁড়িয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ। এই টাকা নিয়ে আপনারা ভালো কিছু করতে পারলে ভবিষ্যতেও আপনাদের পাশে থাকবে বসুন্ধরা ফাউন্ডেশন ও বসুন্ধরা গ্রুপ। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান স্যার ও তার পরিবারের জন্য আপনারা সবাই দোয়া করবেন। আল্লাহ যেন তাঁদের দীর্ঘজীবী করেন এবং সবসময় যেন আমরা উঁনাদের সহায়তা নিয়ে আপনাদের পাশে দাঁড়াতে পারি।
৬ মাসের বাচ্চা কোলে নিয়ে ঋণ নিতে এসেছেন বারাই গ্রামের সুমি আক্তার। ক্ষুদ্রঋণের খামটি হাতে পেয়ে তার মুখে ফুটে আনন্দের ঝিলিক। সুমি জানান, আগেও একবার ১৫০০০ টাকা ঋণ পেয়েছি। সেই টাকায় একটা বাছুর কিনেছিলাম, বাছুরটি বড় হয়েছে এবং বিক্রি করে ভালোই লাভবান হয়েছি। এবার টাকা নিয়ে বিভিন্ন জাতের কবুতর পালন করব। কবুতর পালন করে আমাদের এলাকায় অনেকে লাভবান হয়েছেন। আমিও চেষ্টা করব কবুতর পালন করে স্বাবলম্বী হতে।
একই গ্রামের আকলিমা জানিয়েছেন, তিনি এই টাকা নিয়ে একটি সেলাই মেশিন ক্রয় করবেন। আকানগর গ্রামের দেবী জানালেন, তিনি মাছের ব্যবসা করবেন। রামপুর চকের বাড়ির জুলেখা, নালা দক্ষিণের রহিমা বেগম জানিয়েছেন, ক্ষুদ্রঋণের টাকায় তারা ছাগল পালন করবেন। এভাবেই অনেককে জানিয়েছেন তাদের নানা স্বপ্নের কথা।
আয়োজকরা জানান, ২০০৫ সাল থেকে চালু হওয়া এই ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ২৮ হাজার ৭০১ জন ঋণ গ্রহণ করেছেন। এখন পর্যন্ত ২৮ কোটি ৪ লাখ ৭০ হাজার পাঁচশত টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
কয়েকজন সুবিধাভোগী জানান, বসুন্ধরা ফাউন্ডেশন থেকে ক্ষুদ্রঋণ নিতে কোন সার্ভিস চার্জ দিতে হয় না। সহজ কিস্তির মাধ্যমে ঋণের টাকা পরিশোধ করা যায়। যে পরিমাণ টাকা ঋণ নেওয়া হয় তার থেকে একটি টাকাও বেশি দিতে হয় না। এমন সুযোগ আর কোথাও পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না।
জানা যায়, শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ঋণ নেওয়া প্রায় উনিশ হাজার মানুষের মধ্যে ৭৫ ভাগেরও বেশি মানুষ সফল হয়েছেন। তারা সবাই এখন স্বাবলম্বী। দরিদ্র পরিবারের নারীদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের স্বাবলম্বী করার এই প্রচেষ্টা চলতেই থাকবে।