গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে আমরা গভীর পরিতাপ ও উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে দেশে এক ধরনের মব তৈরি করে হামলা, অবমাননা, নির্যাতনের সংস্কৃতি চালু হচ্ছে। এটা অত্যন্ত বিপজ্জনক। অভ্যুত্থানের ১০ মাস অতিবাহিত হলেও এসব ক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে কার্যকর কোনো ভূমিকায় আমরা দেখতে পাইনি, বরং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাদের উপস্থিতি থাকলেও নিষ্ক্রিয় দেখা গেছে। মব সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণে সরকারের এই ব্যর্থতা গ্রহণযোগ্য নয়। শুধু বিবৃতি দিয়ে দায় সারলে চলবে না অবশ্যই উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।
মঙ্গলবার রাজধানীর হাতিরপুলে অবস্থিত গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
জোনায়েদ সাকি বলেন, সম্প্রতি ১৮ সালের নৈশ নির্বাচনের হোতা নুরুল হুদাকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সামনে জুতার বাড়ি দেওয়া বা জুতার মালা গলায় পরানোর ঘটনা আমরা দেখলাম। বাংলাদেশে ১৪, ১৮ ও ২৪-এর প্রহসনের নির্বাচনের পেছনে যারা ছিলেন, তাদের প্রত্যেকেরই এসব নির্বাচনের ও গণতন্ত্র ধ্বংসের দায় আছে এবং তাদের সবাইকে বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। কিন্তু বিচারের আগেই তাদের মব সৃষ্টি করে হেনস্তা করার মাধ্যমে অপরাধীর বিমানবিকীকরণের যে উদাহরণ সৃষ্টি হচ্ছে তা মোটেই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কোনো দৃষ্টান্ত নয়। অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে আমরা ন্যায়বিচার দেখতে চাই, বিচারের নামে কোনো প্রহসন কিংবা মব বিচার যাতে আর কোনোভাবেই চলতে না পারে, সেজন্য সরকারকে অবিলম্বে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির অফিসের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, 'আমরা জাতীয় নাগরিক পার্টির অফিসের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। অবিলম্বে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে এ বিষয়ে দায়ীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
কারণ, সুষ্ঠু তদন্ত না হলে এবং অপরাধীদের বিচারের আওতায় না আনা হলে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা ঘটার আরো সুযোগ তৈরি হবে। সামগ্রিকভাবে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে।'
এর আগে সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন দলটির নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল। তিনি বলেন, আগামী ১০ থেকে ১২ অক্টোবর গণসংহতি আন্দোলনের ৫ম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে মাসব্যাপী কর্মসূচি পালন করবে গণসংহতি আন্দোলন।
কর্মসূচির মধ্যে থাকবে ৪ জুলাই জুলাই যোদ্ধা এবং শহীদ পরিবার ও আহতদের সম্মেলন, ৫ জুলাই গণসংহতি আন্দোলনের তরুণ জুলাই যোদ্ধাদের নতুন বাংলাদেশ ভাবনা নিয়ে মতবিনিময় ও বিশেষ জাতীয় বর্ধিত সভা, ১৬ জুলাই শহীদ আবু সাঈদের স্মৃতিবিজড়িত রংপুর জেলায় জুলাই সমাবেশ, ২৫ জুলাই ঢাকায় জুলাই গণসমাবেশ, ১ আগস্ট শহীদ জুলফিকার শাকিলের স্মৃতিবিজড়িত ঢাকার মিরপুরে জুলাই সমাবেশ ও ৪ আগস্ট জুলাই এবং আগস্টের শহীদদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।'
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন দলটির রাজনৈতিক পরিষদ সদস্য মনির উদ্দিন পাপ্পু, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বাচ্চু ভূইয়া, জুলহাসনাইন বাবু, দিপক কুমার রায়, কেন্দ্রীয় সদস্য আলিফ দেওয়ান, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক মনিরুল হুদা বাবন, জাতীয় পরিষদ সদস্য পপী রানী সরকার ও তৌহিদুর রহমান প্রমুখ।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত