চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে অবস্থিত জিপিএইচ ইস্পাত পরিবেশবান্ধব শিল্পায়নের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। কারখানাটি তাদের উৎপাদনে শূন্যবর্জ্য পানি শোধনাগার, বদ্ধচক্র শীতলীকরণ এবং বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ লেকের মতো উদ্ভাবনী সবুজ প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। জিপিএইচ ইস্পাতের এ উদ্যোগ পরিবেশ সুরক্ষা এবং টেকসই উন্নয়নের পথে দেশের শিল্প খাতকে একটি নতুন বার্তা দিচ্ছে।
জিপিএইচ ইস্পাতের পরিবেশ, স্বাস্থ্য এবং সেফটি বিভাগের প্রধান শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘জিপিএইচ সর্বাধুনিক কোয়ান্টাম আর্ক ফার্নেসে সর্বোচ্চ বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করে বিলেট উৎপাদনের পাশাপাশি বিদ্যুতের সাশ্রয়ী ব্যবহার, সৌরবিদ্যুৎ, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে উৎপাদনে ব্যবহার, পানি ও বায়ু পরিশোধনসহ বিভিন্ন ব্যবস্থার মাধ্যমে কারখানাটি পরিবেশবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি শিল্পের উন্নয়ন এবং পরিবেশ সুরক্ষা একে অন্যের পরিপূরক। আমাদের লক্ষ্য একটি টেকসই ভবিষ্যৎ নির্মাণ, যেখানে শিল্পায়ন হবে কিন্তু পরিবেশের কোনো ক্ষতি হবে না।’ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহারের উদ্যোগ টিকিয়ে রাখতে এবং আরও ছড়িয়ে দিতে সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনা দেওয়া জরুরি। পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহারকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে করছাড়, সহজ শর্তে ঋণসুবিধা এবং বিশেষ স্বীকৃতি প্রদান করা হলে তা দেশের সামগ্রিক শিল্পায়ন ও পরিবেশ সুরক্ষায় একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে। এটি সরকারের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও সহায়ক হবে।
জানা যায়, বাংলাদেশের শিল্প খাত ধীরে ধীরে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির সমন্বয়ে গড়ে তুলছে এক নতুন শিল্পসংস্কৃতি। সরকারি পর্যায়ে পর্যাপ্ত অবকাঠামোগত সহায়তা না থাকলেও কিছু প্রতিষ্ঠান নিজেদের উদ্যোগে এমন সব টেকসই সমাধান বাস্তবায়ন করছে যা শুধু উৎপাদন নয়, বরং পরিবেশ সংরক্ষণ ও সম্পদ ব্যবস্থাপনাকে সমান গুরুত্ব দিচ্ছে। এ রকমই একটি প্রতিষ্ঠান জিপিএইচ ইস্পাত। এ শিল্পপ্রতিষ্ঠান সীতাকুণ্ডের মতো ভারী শিল্পাঞ্চলে নিজেদের অর্থায়নে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ লেক নির্মাণ করেছে; যাতে বর্ষাকালের পানি সংরক্ষণ করে শুকনো মৌসুমে শিল্পকার্যে ব্যবহার করা যায়। পাশাপাশি রয়েছে ‘শূন্যবর্জ্য পানি শোধনাগার’, যা শিল্পের ব্যবহৃত পানি পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করে আবার ব্যবহারযোগ্য করে তুলছে। রয়েছে ‘বদ্ধচক্র শীতলীকরণ’, যা নতুন পানির চাহিদা নাটকীয়ভাবে কমিয়ে দেয়। এ পরিবেশবান্ধব সমাধানগুলো কেবল পরিবেশ রক্ষা করছে না, বরং শিল্পের দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে অনেক উন্নত দেশে সরকারি অর্থায়নে শিল্পাঞ্চলে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়াটার পাইপলাইন, রিজার্ভয়ার এবং ডিস্যালিনেশন প্ল্যান্ট নির্মিত হয়। বাংলাদেশে এ ধরনের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অভাব রয়েছে। এ ছাড়া আধুনিক টেকসই প্রযুক্তি নিয়ে সরকারি ডেটাবেস ও ফিল্ড পর্যায়ের জ্ঞানের মধ্যে বড় ফাঁক আছে, যা নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে পিছিয়ে দিচ্ছে।