রাজশাহীর একটি কোচিং সেন্টার থেকে দেশিবিদেশি অস্ত্রসহ বোমা তৈরির বিস্ফোরক উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী। ‘ডক্টর ইংলিশ’ নামে ওই কোচিং সেন্টারটি পরিচালনা করতেন মহানগরী বিএনপির সাবেক সহসভাপতি শফিউল আলম লাটকুর ছেলে মুনতাসিরুল অনিন্দ্য। তিনি রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের চাচাতো ভাই। এ ঘটনায় সেনাবাহিনী অনিন্দ্যসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। পরে অস্ত্র, গোলাবারুদসহ তাঁদের পুলিশে সোপর্দ করা হয়। গতকাল আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানার দরিখরবোনা এলাকায় সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ অভিযান পরিচালিত হয়। এক মাসের বেশি তারা অনিন্দ্যকে গোয়েন্দা নজরদারিতে রেখেছিলেন। শুক্রবার রাত ১টা ৩০ মিনিট থেকে গতকাল বিকাল পৌনে ৪টা পর্যন্ত রাজশাহী নগরীর কাদিরগঞ্জে আহলে হাদিস মসজিদের পূর্বে অবস্থিত ডক্টর ইংলিশ কোচিংসহ আশপাশ এলাকায় অভিযান চালানো হয়। অস্ত্রের অনুসন্ধানে পাশের পুকুরে ডুবুরি নামিয়েও তল্লাশি চালানো হয়। অভিযানে আটকরা হলেন মুনতাসিরুল অনিন্দ্য, মো. রবিন ও মো. ফয়সাল। উদ্ধারকৃত অস্ত্রের মধ্যে আছে ৩টি আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি, সামরিক মানের দুরবিন ও স্নাইপার স্কোপ, ৬টি দেশি অস্ত্র, ১১টি নাইট্রোজেন কার্টিজ (বিস্ফোরণের কাজে ব্যবহৃত তাজা সামগ্রী হওয়ায় বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট দ্বারা নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে), বিদেশি ৭টি ধারালো ডেগার, ৫টি উন্নতমানের ওয়াকিটকি সেট, একটি সামরিক মানের জিপিএস, একটি টিজার গান, বিভিন্ন দেশিবিদেশি কার্টিজ, বিপুলসংখ্যক অব্যবহৃত সিম কার্ড, বিস্ফোরক বোমা বানানোর সরঞ্জামাদি, ৬টি কম্পিউটার সেট, নগদ টাকা, বিভিন্ন দেশিবিদেশি মদের বোতল। জানা যায়, এসএসসি ও এইচএসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন অনিন্দ্য। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে ভর্তির পর প্রথমে ছাত্রদল করতেন। এরপর ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়ান। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আহমদ-বিপু কমিটিতে হঠাৎই অনিন্দ্য আপ্যায়নবিষয়ক সম্পাদকের পদ পেয়ে যান। অনিন্দ্যের এ পদ পাওয়ার জন্য মহানগরী আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক খায়রুজ্জামান লিটনকে দায়ী করা হয়েছিল। এ নিয়ে নেতা-কর্মীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হলেও লিটনের ভয়ে কেউই মুখ খুলতে সাহস পাননি। এভাবেই কিছুদিন চলে। তারপর অনিন্দ্য রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন। ধীরে ধীরে তার চলাফেরা ও আচরণ বদলাতে থাকে। ২০১৬ সালের জুলাইয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে দীর্ঘদিন কারাগারে ছিলেন। এ ছাড়া অনিন্দ্য বহুল আলোচিত হলি আর্টিজান মামলায় গ্রেপ্তার আসামিদের অন্যতম।
রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার আবু সুফিয়ান বলেন, গ্রেপ্তার আসামির বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনে হামলার অভিযোগ আছে। উদ্ধারকৃত অস্ত্রের বিষয়ে তদন্ত হবে। আসামিদের ব্যাপারেও তদন্ত হবে।