দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে আরও ৮৪ জনকে পুশইন করেছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। গতকাল ভোরে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, খাগড়াছড়ি, ঝিনাইদহ, লালমনিরহাট ও ফেনী সীমান্ত দিয়ে তাদের জোরপূর্বক বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি জানান, জেলার জুড়ী সীমান্ত দিয়ে ১০ ও কমলগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ১৯ জনকে পুশইন করেছে বিএসএফ। পরে তাদের আটক করে স্থানীয় থানায় হস্তান্তর করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। শ্রীমঙ্গল ৪৬ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ এস এম জাকারিয়া বলেন, ভোরে বৃষ্টির মধ্যে কমলগঞ্জ উপজেলার বাগিছড়া সীমান্ত দিয়ে পাঁচজন এবং চাম্পারায় সীমান্ত দিয়ে ১৪ জনকে পুশইন করে বিএসএফ। আটকদের মধ্যে নারী, পুরুষ ও শিশু রয়েছে। তাদের অনেকের বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলায়।
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, চুনারুঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী রেমা-কালেঙ্গা জঙ্গল দিয়ে ২২ জনকে ঠেলে পাঠিয়েছে বিএসএফ। ভোরের কোনো একসময় কালেঙ্গা সীমান্তবর্তী ডেবরাবাড়ী এলাকা দিয়ে তাদের ঠেলে পাঠানো হয়। এর মধ্যে পুরুষ নয়জন, নারী আটজন এবং পাঁচটি শিশু রয়েছে। তাদের প্রত্যেকের বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলায়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিজিবি হবিগঞ্জ ৫৫ ব্যাটালিয়নের সহকারী পরিচালক হাবিবুর রহমান। চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রবিন মিয়া বলেন, ‘২২ জনকে পুশইনের বিষয়টি শুনেছি। তারা এখন বিজিবির হেফাজতে রয়েছেন।’ খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি জানান, মাটিরাঙার তাইন্দং সীমান্ত দিয়ে ১৪ জনকে পুশইন করেছে ভারত। ভোরে তাদের দেখতে পেয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও বিজিবিকে খবর দেন স্থানীয়রা। পুশইন হয়ে আসা ব্যক্তিদের হেফাজতে নেওয়ার পর স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাখা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক এ বি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার। ফেনী প্রতিনিধি জানান, ভোরে ছাগলনাইয়ার সীমান্ত দিয়ে নারী, শিশুসহ ১৩ জনকে ঠেলে পাঠিয়েছে বিএসএফ। খবর পেয়ে তাদের আটক করে বিজিবি। এদের মধ্যে রয়েছেন মো. আলতাফ (৩৯), তার স্ত্রী মোমিনা বেগম (৩২); মো. আমিনুল ইসলাম (৩৮), তার স্ত্রী ঊর্মি বেগম (২৯); মোমিনুল হক (৩৫), তার স্ত্রী শেফালী বেগম (৩০) এবং ইশরাক হোসেন (৪০) এবং ছয়টি শিশু। বিজিবি জানায়, ছাগলনাইয়ার মটুয়া সীমান্ত ফাঁড়ির দায়িত্বপূর্ণ সীমান্ত দিয়ে ঠেলে পাঠানো চারটি পরিবারের ১৩ জনকে আটক করে থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানান, মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে পাঁচ নারী ও পাঁচ শিশুকে ঠেলে পাঠিয়েছে বিএসএফ সদস্যরা। পরে বিজিবি তাদের আটক করে। মহেশপুর ৫৮ বিজিবির সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, গতকাল বিকালে মহেশপুর সীমান্তের বেনিপুর মেহগনি বাগানের মধ্যে বিএসএফ সদস্যরা পাঁচ নারী ও পাঁচ শিশুকে পুশইন করে। এরপর বাংলাদেশি এই ১০ নাগরিককে আটক করে বিজিবি। আটকদের মহেশপুর থানা পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে।
লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানান, পাটগ্রাম উপজেলায় সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো ছয় ভারতীয় নাগরিককে। পরে তাদের আটক করে বিজিবি। তারা সবাই ভারতের আসাম রাজ্যের বাসিন্দা। গতকাল বিকালে উপজেলার বুড়িমারী রেলস্টেশন থেকে তাদের আটক করা হয়।
বিজিবি ও স্থানীয়রা জানান, গত ২৮ মে রাতে হাতীবান্ধা উপজেলার দইখাওয়া সীমান্তের ওপারে বিএসএফ সদস্যরা ওই ছয় ব্যক্তিকে সীমান্ত পিলার ৯০৮/এস এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠায়।
৬১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের বুড়িমারী স্থলবন্দর ক্যাম্পের কমান্ডার সুবেদার আবুল কাশেম বলেন, আটকদের তথ্যাদি বিএসএফকে দেওয়া হয়েছে। সেগুলো যাচাইবাছাই করে শনিবার (আজ) পুলিশের মাধ্যমে ফেরত নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিএসএফ।