জাপানে চার দিনের সরকারি সফর শেষে গত রাতে দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সফরকালে প্রধান উপদেষ্টা টোকিওতে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইশিবার সঙ্গে বৈঠকসহ প্রায় ২০টি কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন বলে জানিয়েছেন তাঁর উপ প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।
তিনি জানান, নিক্কেই ফোরামে অংশ নিতে গত ২৮ মে জাপানের টোকিওতে পৌঁছান অধ্যাপক ইউনূস। গতকাল স্থানীয় সময় বেলা ১১টা ২০ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর সফরসঙ্গীদের বহনকারী সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট সিঙ্গাপুর হয়ে ঢাকার উদ্দেশে টোকিওর নারিতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে।
আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, পুরো সফরের সময়টাতে প্রধান উপদেষ্টা ব্যস্ততম সময় পার করেছেন। সফরের তৃতীয় দিনে গত শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইশিবার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। বৈঠকে দুই নেতা চলতি বছরের মধ্যে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যেকার অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি (ইপিএ) স্বাক্ষরের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন, যার মাধ্যমে দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও গভীর হবে। জাপানি প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে বাজেট সহায়তা ও রেলপথ উন্নয়নের জন্য ১ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণের প্রতিশ্রুতি দেন। ওই দিন তিনটি চুক্তিপত্র বিনিময় হয়। এগুলো হলো অর্থনৈতিক সংস্কার ও জলবায়ু পরিবর্তনের সহনশীলতা শক্তিশালীকরণে ডেভেলপমেন্ট পলিসি ঋণ (৪১৮ মিলিয়ন ডলার), জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী ডুয়েল-গেজ ডাবল লেন রেলপথ প্রকল্পের জন্য ঋণ (৬৪১ মিলিয়ন ডলার) এবং মানবসম্পদ উন্নয়ন বৃত্তির জন্য অনুদান (৪ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার)।
একই দিনে প্রধান উপদেষ্টা ‘বাংলাদেশ বিজনেস সেমিনার’-এ বক্তব্য দেন, যেখানে দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক, বিনিয়োগ ও অন্যান্য সহযোগিতার ক্ষেত্রে ছয়টি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর হয়।
এর আগে বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার উপস্থিতিতে বাংলাদেশ ও জাপান দুইটি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করে, যার উদ্দেশ্য বাংলাদেশের কর্মশক্তির দক্ষতা বৃদ্ধি এবং জাপানে তাদের কর্মসংস্থান সহজতর করা। এই চুক্তিগুলো টোকিওর হিরাকাওচো চিয়োদা সিটিতে বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত মানবসম্পদ সেমিনারে স্বাক্ষরিত হয়। অনুষ্ঠানে জাপানি কর্তৃপক্ষ ও ব্যবসায়ীরা তাদের শ্রমসংকট মোকাবিলায় আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশ থেকে অন্তত এক লাখ কর্মী নিয়োগের পরিকল্পনার কথা জানান। একই দিন প্রধান উপদেষ্টা ৩০তম নিক্কেই ফোরাম : ফিউচার অব এশিয়া-তে মূল বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন।
নিক্কেই ফোরামের পাশাপাশি, অধ্যাপক ইউনূস মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং বাংলাদেশকে আসিয়ানের সদস্যপদ পেতে সমর্থনের আহ্বান জানান।
গত শুক্রবার সোকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক ইউনূসকে সামাজিক উদ্ভাবন ও বৈশ্বিক উন্নয়নে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে।